সকাল থেকে বারবার তাঁর মোবাইল ফোন বেজে যাচ্ছিল। ডাক্তারির ছাত্রী ওই তরুণীর ফ্ল্যাটের বেল বাজিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন কলের মিস্ত্রিও। পরে ওই ফ্ল্যাট থেকে আরও দু’জনের সঙ্গে বেরোতে গিয়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন এক তরুণ।
শনিবার সকালে ওই তরুণীর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। টিটাগড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের একটি আবাসনের ঘটনা। আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত তরুণীর সহপাঠী এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের মামলা রুজু করে তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত তরুণীর নাম পিঙ্কি সাউ (২৪)। তাঁর সহপাঠী সত্যজিৎ রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের সমিতির কর্তা প্রবীর ঘোষ লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, “মেয়েটির সহপাঠীর হাবভাব সন্দেহজনক ছিল। ফ্ল্যাটের বেল বাজলে ফ্ল্যাটে থাকা সত্ত্বেও দরজা খোলেননি তিনি। পরে চুপিসাড়ে দু’জন অপরিচিত যুবকের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।”
পুলিশি সূত্রের খবর, ধৃত সত্যজিৎ জানিয়েছেন, সকালে উঠে তিনি দেখেন গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন পিঙ্কি। তাঁর দেহ নামিয়ে রেখে টালিগঞ্জে নিজের বাড়িতে খবর দিয়েছিলেন ওই যুবক। সেইমতো সত্যজিতের এক আত্মীয় ও প্রতিবেশী টিটাগড়ে চলেও আসেন। পুলিশকে সত্যজিৎ আরও জানিয়েছেন, তিনি তখনও বিশ্বাস করতে পারেননি যে পিঙ্কি মারা গিয়েছেন। তাই ডাক্তার ডাকতেই বেরোচ্ছিলেন। পিঙ্কির গলাতে ফাঁসের চিহ্ন দেখতে পেয়েছে পুলিশ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রহস্যজনক মৃত্যু। ঠিক কী ঘটেছে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, হলদিয়া ডেন্টাল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী পিঙ্কির বাড়ি কোচবিহারে। মাঝে মধ্যে হলদিয়া থেকে টিটাগড় এলাকার পারিবারিক ফ্ল্যাটে চলে আসতেন তিনি। শুক্রবার রাতে যেমন এসেছিলেন। সঙ্গী কলেজেরই সহপাঠী, সত্যজিৎ। সত্যজিতের বক্তব্য অনুযায়ী, আজ, শনিবার পিঙ্কির মুম্বইয়ে যাওয়া কথা ছিল। এই নিয়ে ওই রাতে তাঁদের মধ্যে বচসা হয়। তার পর পিঙ্কি নিজের ঘরে শুতে চলে যান। সত্যজিৎ শুয়েছিলেন বসার ঘরে। সকালে পিঙ্কির বন্ধ ঘরের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে সাড়া মেলেনি। তখন চাড় দিয়ে দরজার নীচের অংশ ভেঙে ভিতরে ঢোকেন তিনি। দেখতে পান, পিঙ্কির দেহ ঝুলছে।
তড়িঘড়ি দেহ নামিয়ে ওই যুবক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, সকালে কলের মিস্ত্রি বেল বাজালেও ভয় পেয়েই তিনি দরজা খোলেননি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ফ্ল্যাটের ভিতরে কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। দু’টি মদের বোতল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, পিঙ্কি ও তাঁর সহপাঠী সত্যজিৎ দু’জনেই মেধাবী ছাত্র। দু’জনের বন্ধুত্বও বেশ কিছু দিনের। হলদিয়া থেকেই টিটাগড়ে পিঙ্কিদের পারিবারিক ফ্ল্যাটে চলে এসেছিলেন দু’জনে। পিঙ্কির বাবাও সকালে কয়েকবার মেয়ের মোবাইলে ফোন করেছিলেন। মেয়ের সাড়া মিলছে না দেখে আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তিনি। পিঙ্কির মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিনই কোচবিহার থেকে টিটাগড়ে রওনা হন পরিবারের লোক জন। |