মায়ের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল চার বছরের সঙ্গীতা। তার পর থেকে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও মেয়ের কোনও সন্ধান পাননি কালীঘাটের কুমারেশ ও কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ বাইশ বছর পর শনিবার সেই মেয়েকে খুঁজে দিল সিআইডি।
১৯৯০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মেয়েকে নিয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন কৃষ্ণাদেবী। সেখান থেকেই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় তাঁর মেয়ে। এ দিক-সে দিক খোঁজাখুজির পরে মেয়েকে না পেয়ে এন্টালি থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করা হয়। তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও তারা প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। ২০০১ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে আবেদন জানান মুখোপাধ্যায় দম্পতি। তার ভিত্তিতে ফের সক্রিয় হয় পুলিশ। মেয়েকে ফিরে পেতে গত বছরের এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হন তাঁরা। ওই বছরের নভেম্বর মাসে আদালতের নির্দেশেই সঙ্গীতাকে ফিরে পেতে তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
কী ভাবে মিলল সঙ্গীতার খোঁজ?
ডিআইজি (সিআইডি) শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে বাইশ বছর পর মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। |
বাবা মেয়েকে শনাক্ত করেছেন। আজ, রবিবার তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হবে।
সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্তে জানা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধামুয়ার সালকিয়া বাজারে এক তরুণী রয়েছেন। তাঁর নাম সঙ্গীতা। স্থানীয় বাসিন্দা কমলেশ হালদারের পালিতা কন্যা তিনি। তাঁকে বছর বাইশ আগে ধামুয়া স্টেশনে পাওয়া গিয়েছিল। এর পর সিআইডি-র ইন্সপেক্টর শর্বরী ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল ধামুয়া যান। তাঁরা জানতে পারেন, বছর কয়েক আগে ওই এলাকাতেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। দেখা যায়, কালীঘাটের রজনী ভট্টাচার্য লেনের বাসিন্দা কুমারেশবাবুর হারানো মেয়ের সঙ্গে ওই তরুণীর মিল পাওয়া যাচ্ছে। এমনকী, তরুণী তাঁর মায়ের নাম বলছে কৃষ্ণা, যা কুমারেশবাবুর স্ত্রীর নাম। এর পরেই তাঁরা কুমারেশবাবুকে খবর দেন। যদিও কমলেশবাবুর দাবি, একটি সংবাদপত্রে ছবি-সহ প্রতিবেদন দেখে তাঁরাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কমলেশবাবু জানান, বছর বাইশেক আগে তাঁর শ্যালক হরিহর মণ্ডল ধামুয়া স্টেশনে একটি মেয়েকে খুঁজে পান। সে তার নাম বলেছিল, সঙ্গীতা। তার পর থেকে তিনিই ওই মেয়েটিকে মানুষ করেন।
কুমারেশবাবু অবশ্য মেয়েকে পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত। তিনি বলেন, “সব কিছু খতিয়ে দেখে নিশ্চিত, ও আমারই মেয়ে। তবুও ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন জানিয়েছি।” পুলিশেরও একটি সূত্রের দাবি, ডিএনএ
পরীক্ষা হলে তবেই এই মেয়েটি যে কুমারেশবাবুর তা নিশ্চিত করে বলা যাবে। হাসপাতাল থেকে ধামুয়া পর্যন্ত চার বছরের মেয়েচি পৌঁছল কী ভাবে, তা-ও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। |