বিভিন্ন প্রজন্মে আমাদের দেশের ডেভিস কাপে যা সাফল্য তার পাশে চণ্ডীগড়ে নিউজিল্যান্ডকে হারানো হয়তো কোনও খবরই নয়। কিন্তু একটা তাৎপর্য তো থাকছেই যে, ভারতের দলগত টেনিসকে আরও লজ্জার থেকে বাঁচাল সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের টিম। ডেভিস কাপের মঞ্চে য়ুকি, বিষ্ণু, দ্বিবীজরা একেবারে অনভিজ্ঞ। চণ্ডীগড়ের স্টেডিয়ামে বসে এই তরুণদের খেলা দেখতে দেখতে আরও যেন মনে হচ্ছে, লিয়েন্ডার-মহেশদের কি তা হলে পেনশন স্কিমে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় এসে পড়ল?
অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি, এখনই সেটা করা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তবে আমাদের টেনিস ফেডারেশন নিশ্চয়ই হাঁফ ছাড়ছে চণ্ডীগড়ের ফলাফলে। অলিম্পিক বিতর্কের জেরে মহেশ-বোপান্নাকে এক রকম অলিখিত শাস্তি দিয়ে ডেভিস কাপ দল থেকে বাদ দিয়েছে এআইটিএ। দুর্বল নিউজিল্যান্ডের কাছে তরুণ ভারতীয় দল হারলে হয়তো মুখে চুনকালি মেখেও মহেশদের ভবিষ্যতে ডেভিস কাপে ফেরাতে হত ফেডারেশনকে। এখন সেই ব্যাপারটা আর থাকছে না। মহেশদের ফেরানোর আর দরকার দেখছি না। টেনিসের পেশাদার সার্কিটে কে কত দিন খেলবে সেটা সেই প্লেয়ারের সম্পূর্ণ নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তার দেশের ফেডারেশনের সেখানে কোনও হাত নেই। কিন্তু ডেভিস কাপে প্রতিটা দেশের টেনিস ফেডারেশনের নির্বাচিত জাতীয় দল খেলে। বিষ্ণু বর্ধন-দ্বিবীজ শরণ জুটি ডেভিস কাপে আত্মপ্রকাশেই যে ভাবে চাপের মুখে পাঁচ সেটে জিতল এ দিন, তার পরে ওদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে। ডেভিস কাপের আঞ্চলিক (এশিয়ান-ওশেনিয়ান) গ্রুপে দ্বিতীয় সারিতে (গ্রুপ টু) নেমে যাওয়া তো অন্তত আটকাল এরা। |
আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ডেভিস কাপে আমরা এই প্রথম ডাবলসে ডান হাতি-বাঁ হাতি কম্বিনেশন পেলাম। যার মানে, দু’টো ‘অ্যাঙ্গল’ থেকে ক্রমাগত শট ঠিকরে বেরোবে বিপক্ষ জুটির দিকে। এত দিন ডেভিস কাপে ডাবলসে এই বৈচিত্র ছিল না আমাদের। ব্রায়ান ভাইদের ডাবলস সার্কিটে এত রমরমার পিছনে কিন্তু দুই যমজের একজনের ডান হাতি, অন্যজনের বাঁ-হাতি হওয়া বিশাল ফ্যাক্টর।
লিয়েন্ডারকে নিয়ে অবশ্য আমার একটা আলাদা বক্তব্য আছে। ২৩ বছর ধরে ডেভিস কাপ খেলছে। ওর পাহাড়প্রমাণ অভিজ্ঞতার যেমন এখনও দরকার আছে ভারতীয় দলের কাছে। তেমনই লিয়েন্ডারের অভিভাবকত্বও এই তরুণ দলের পক্ষে উপকারী হবে বলেই আমার মনে হয়। তা ছাড়া লিয়েন্ডারকে তো ওর বর্তমান ফর্মের ভিত্তিতেও ডেভিস কাপের বাইরে রাখার কোনও প্রশ্ন নেই। এ বছরই ডাবলসে গ্র্যান্ড স্ল্যাম (অস্ট্রেলীয় ওপেন) জিতেছে। এ মাসেই আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম (যুক্তরাষ্ট্র ওপেন) ফাইনাল খেলেছে। আর যে প্লেয়ার সার্কিটে ভাল খেলছে, সে তো ডেভিস কাপেও ভাল খেলবে ধরে নিতে হবে। ঠিক যে কারণে রজার ফেডেরার ৩১ বছরেও ডেভিস কাপে খেলছে, এ সপ্তাহেই সুইৎজারল্যান্ড-নেদারল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ টাইয়ে। |