পুলিশকে ‘ওভার বাউন্ডারি’ হাঁকিয়ে জয়যাত্রায় যাচ্ছে বাগান
মোহনবাগান-৬(ওডাফা-২, সাবিথ-২, টোলগে, নির্মল)
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ-০
‘জয়যাত্রায় যাও হে’ লেখা পোস্টার নিয়ে যুবভারতীর টানেলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকশো মোহনবাগান সমর্থক। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে তাঁদের বাড়ানো হাত ছুঁয়ে শুভেচ্ছা নিচ্ছিলেন ওডাফা-টোলগেরা।
শিলিগুড়িতে ফেড কাপের উদ্বোধন হতে দিন চারেক দেরি। তার আগেই বোধনের ঢাক বেজে গেল বাগানে। শনিবার বৃষ্টিভেজা যুবভারতীতে পুলিশকে ‘ওভার বাউন্ডারি’-তে পাঠিয়ে।
হোক না লাটবাগানের ‘দুর্বল’ পুলিশবাহিনী। হোক না কলকাতা লিগের সবথেকে দুর্বল টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ। হোক না বিদেশিহীন প্রতিপক্ষ। তাতে কী? ইতালিয়ান ব্র্যান্ডের নতুন সবুজ-মেরুন জার্সি পরে সন্তোষ কাশ্যপের দল যা খেলল তাতে দু’বছরের ট্রফিহীন গঙ্গাপারের ক্লাব সমর্থকরা নতুন মরসুমের শুরুতেই সোনালি স্বপ্ন দেখা শুরু করতেই পারেন।
ভিভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখছিলেন টোলগের বান্ধবী সেরাপ। ভারতে আসার আগে অস্ট্রেলিয়ায় একটি অ্যাকাউন্টস ফার্মে চাকরি করতেন। তিনিও ম্যাচের পর কতগুলো গোল হয়েছে, তা নিয়ে ধন্ধে! “সিক্স অর সেভেন?” জানতে চাইছিলেন পরিচিতদের কাছে। তাঁর দোষ নেই। কারণ মোহনবাগান হাফ ডজন গোল করেছে, বাতিল হয়েছে তো আরও দুটো গোলজুয়েল রাজা আর ডেনসন দেবদাসের।
জাতীয় কোচ উইম কোভারম্যান্স চাইছেন দেশের সব ক্লাব কোচেরা তাঁর ফর্মুলা মেনে পাসিং ফুটবল খেলান। যাতে ক্লাব থেকে দেশের শিবিরে গিয়ে ফুটবলাররা সমস্যায় না পড়েন। মোহন-কোচকে তিনি ধন্যবাদ দিতেই পারেন, রহিম নবি-নির্মল ছেত্রী-জুয়েল রাজাদের একই ‘ছাঁচে’ রেখে দেওয়ার জন্য।
ম্যাচের পরে ভক্তদের শুভেচ্ছা নিচ্ছেন ওডাফা।ছবি: উৎপল সরকার
সাত মিনিটের মধ্যে ২-০। আটাত্তর মিনিটের মধ্যে আরও চারটে। মাইক্রোস্কোপের নীচে ছ’গোলকে ফেলে দেখা যাচ্ছে, পাসিং ফুটবলের আংশিক প্রয়োগের সুফল প্রিমিয়ার লিগে তাদের প্রথম ম্যাচেই পেয়েছে মোহনবাগান। সন্তোষ কাশ্যপের সহজ ফর্মুলা মাঝমাঠ থেকে পাস খেলতে খেলতে উইংয়ে বল পাঠাও। তারপর হয় বল তোলো, নয়তো বিপক্ষ বক্সের মাথায় পাস করো। সেখানে যে আছে সাড়ে তিন কোটির দুই কোহিনুর ওডাফা আর টোলগে। যাঁদের পায়ে বল পড়লেই তো ‘কেল্লা ফতে’। এ দিনও তো ছ’টার মধ্যে তিনটেই এল যুগলবন্দির দৌলতে।
কিন্তু ‘মহীরুহের’ নীচে যে সাবিথের মতো ‘ছোট গাছ’-ও গোকুলে বাড়ছে, সেটা কে জানত? ওডাফার পাশে শুরু থেকে খেলতে নেমেই জোড়া গোল। পৈলান অ্যারোজ থেকে আসা মালওয়ালি স্ট্রাইকারের ‘তাকত’ চোখে পড়ল বারবার। সম্ভবত সে জন্যই দল ছ’গোলে জেতায় মোহন-কোচ যত না খুশি, তার চেয়েও তিনি বেশি আনন্দিত সাবিথ-ফেনাই-মণীশ ভার্গবদের জেদ দেখে। “রিজার্ভ বেঞ্চের ছেলেরাও ভাল খেলছে, ছ’গোলে জেতার চেয়ে এটাই আমাকে বেশি খুশি করেছে,” বলছিলেন সন্তোষ কাশ্যপ।
গত পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কোনও ফুটবলার চাকরি পাননি। মেহতাব-স্বরূপ-দীপঙ্করদের মতো যাঁরা ব্রাজিলের রঙের জার্সি পরে ওডাফাদের রুখতে নেমেছিলেন তাঁদের গড় বয়স তিরিশ। সেটা মনে হয় ম্যাচের আগেই জেনে গিয়েছিলেন সন্তোষ। সে জন্য প্রথম একাদশ এবং রিজার্ভ বেঞ্চ ‘ফিফটি-ফিফটি’ করে শুরুতে মাঠে নামিয়েছিলেন। টোলগে-রাকেশ মাসি-খেলেম্বারা নেমেছিলেন অনেক পরে। ম্যাচ তখন অস্তাচলের দিকে।
তবে পয়মন্ত টুর্নামেন্ট ফেড কাপ খেলতে যাওয়ার আগে পুলিশের জালে পরপর বল পাঠানো যদি মোহনবাগানকে স্বস্তি দেয়, তা হলে তাদের অস্বস্তিতে ফেলবেসেন্ট্রাল মিডিও পজিশন। ডেনসনের ডান পা যে একেবারেই সচল নয়! সন্তোষের অসন্তোষের কারণ হতে পারে তাঁর দলের রক্ষণের সমঝোতার অভাবও এবং স্টপার ইচের বিপক্ষ বক্সে বেহিসেবি উঠে যাওয়া।
যে কোনও ফুটবল দলেই কিছু না কিছু ‘খুঁত’ থাকে। মোহনবাগানেরও আছে। দেখার বিষয় হল, সেটা কী ভাবে ঢাকেন মুম্বই থেকে আসা নতুন কোচ।
ফেড কাপের প্রথম প্রতিপক্ষ চার্চিল ব্রাদার্সের কোচ সুভাষ ভৌমিক কিন্তু গোয়া থেকে কলকাতায় এসে গিয়েছেন!

টোলগেদের গ্রুপে মহমেডান
ফেডারেশন কাপে মোহনবাগানের গ্রুপে পড়ল মহমেডান। জামশেদপুরের জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে মহমেডান শনিবার হ্যালকে ৪-০ গোলে চূর্ণ করে পৌঁছে গেল ফেড কাপের মূলপর্বে। হ্যাটট্রিক করলেন ডেভিড সানডে। একটি গোল করেন অসীম বিশ্বাস। হ্যালের বিরুদ্ধে এ দিন ড্র করলেই শিলিগুড়ির টিকিট পেয়ে যেত অলোক মুখোপাধ্যায়ের দল। কিন্তু ড্রয়ের চিন্তা দূরে সরিয়ে প্রথম থেকেই ঝাঁপান সাদা-কালো জার্সির ফুটবলাররা। গোল না পেলেও মাঝমাঠে চমৎকার খেলেছেন গৌরাঙ্গ দত্ত। ৩৭ মিনিটে গোলের খাতা খোলেন সানডে। পাঁচ মিনিট পরেই ২-০ করেন তিনিই। বিরতির পর খেলা শুরু হতেই হ্যাটট্রিক করেন সানডে। ম্যাচের অন্তিম লগ্নে গোলের ব্যবধান বাড়ান। শিলিগুড়িতে মহামেডানের প্রথম ম্যাচ এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ২০ সেপ্টেম্বর। গ্রুপের অপর দুই প্রতিপক্ষ চার্চিল ব্রাদার্স (২২ সেপ্টেম্বর) এবং মোহনবাগান (২৪ সেপ্টেম্বর)। মহমেডান কোচ অলোক বললেন, “মূলপর্বে লড়াই আরও হাড্ডাহাড্ডি। তবে লড়াই ছাড়ব না। শিলিগুড়িতে মহমেডানের আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অসুবিধা হবে না।”

মোহনবাগান:
অরিন্দম, নির্মল, ইচে, বরুণদীপ (খেলেম্বা), স্নেহাশিস (টোলগে), ডেনসন, জুয়েল, মণীশ (রাকেশ), ওডাফা, সাবিথ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.