বিরাট কোহলির নাম শুনলে প্রথমেই ওর একটা মন্তব্য মনে পড়ে যায়। ২ এপ্রিল, ২০১১-র ওয়াংখেড়ে। ভারত সবে বিশ্বকাপ জিতে উঠেছে। মাঠে সব ক্রিকেটারদের সামনে মাইক ধরা হচ্ছে। কোহলি তখন বলেছিল, “এত বছর ধরে সচিন নিজের কাঁধে দেশকে টানছে। এ বার ওকে আমরা নিজেদের কাঁধে তুলে ঘোরাব!” তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এই ছেলেটা সবার চেয়ে আলাদা। দেখে ভাল লাগছে যে, কোহলি কথাটা রেখেছে। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তো ও নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে।
কেন বলছি? দেখুন, প্রতিভা অনেকেরই থাকে। কোহলির তো আছেই। কিন্তু ওকে যেটা সবার ওপরে নিয়ে গিয়েছে, সেটা ওর প্যাশন। ওর সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, ক্রিকেট নিয়ে কোহলির আবেগ কতটা গভীর। দেশের জন্য খেলা, সতীর্থদের জন্য খেলা, ভক্তদের জন্য খেলাএই জিনিসগুলো ওর কাছে প্রচণ্ড গর্বের বিষয়। শুকনো পেশাদারিত্ব নয়, ওর কাছে আবেগটাই আসল। |
গত এক বছরে কোহলির পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়। সবচেয়ে তাৎপর্যের, এই বারো মাসে ওর নামের পাশে হাফসেঞ্চুরির চেয়ে সেঞ্চুরির সংখ্যা বেশি। যেটা বলে দিচ্ছে, একবার সেট হয়ে গেলে সত্যিকারের ম্যাচউইনারের মতো নিজেই কাজটা শেষ করে আসে কোহলি। অন্য কারও অপেক্ষায় থাকে না। আইসিসি-র এই পুরস্কারই বলে দিচ্ছে, গত বছরে ও-ই বিশ্বের সেরা ওয়ান ডে ক্রিকেটার। আর আমি বলব, গত এক বছরে কোহলি সব ফর্ম্যাটেই ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান। বুঝতে পারছেন ওর কৃতিত্ব কতটা? সচিন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, সহবাগ, গম্ভীরদের পিছনে ফেলে দেওয়াটা একেবারেই সহজ নয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কোহলির। ধোনির হাতে কাপ উঠলে তাতে কোহলির বড় অবদান থাকবেই। সহবাগ অসুস্থ থাকায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে ওকে ওপেন করতে দেখলাম। যা দেখে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, তা হলে কি শ্রীলঙ্কাতেও ওপেন করবে কোহলি? |
আমি কিন্তু ধোনিকে বলব, কোহলিকে তিনেই নামাও। বলছি না, ওপেনার হিসেবে কোহলি ভাল খেলতে পারবে না। কিন্তু কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ছয় থেকে ১৪ নম্বর ওভারগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিন নম্বরে এমন কাউকে দরকার যে ইনিংসটাকে সাজাতে পারবে। কোহলি ছাড়া এই জায়গায় অন্য কাউকে ভাবা যায়?
অথচ দু’তিন বছর আগেও ছবিটা অন্য রকম ছিল। তখনকার বিরাট ছিল প্রচণ্ড আগ্রাসী। ওকে ঘিরে মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেই বেশি খবর হত। এখনকার বিরাট কিন্তু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখেছে। এই তো গত আইপিএলের সময় ওর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বিরাট আমাকে বলেছিল, ‘আগে নিজের মেজাজ সামলাতে পারতাম না। এখন শিখে গিয়েছি।’
সামনের কয়েকটা দিনে যদি সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গেও বিরাটের তুলনা শুরু হয়ে যায়, অবাক হব না। কিন্তু আমার মনে হয়, কিংবদন্তিদের সঙ্গে এখনই ওর তুলনা না টানাই ভাল। ছেলেটাকে খেলতে দিন। নিজের ফোকাসটা ঠিক রাখতে দিন। কে বলতে পারে, আগামী দশ বছরে বিরাট পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়বে না? |