তাঁদের দু’জনকে ‘কিনতে’ এত দিন হন্যে হয়ে দর হেঁকেছে বিশ্বের তাবড় ফুটবল টিম। এ বার দর হাঁকতে চলেছেন ওঁরা নিজেরাই। পরস্পরের বিরুদ্ধে।
ফুটবল নয়, একটি গাড়ির জন্য!
দু’জনের ‘আস্তাবলে’ই সার দিয়ে মজুত কিছু স্বপ্নের চারচাকা! তা সত্ত্বেও এই গাড়িটার জন্য ওঁরা দু’জনেই মরিয়া। কারণ, এক বার এই গাড়ির চালকের আসনে বসে পড়তে পারলে যে কোনও লোকেরই নিজের নামটা একটু ‘অন্য ঢঙে’ বলতে ইচ্ছে করবে। এই যেমন ‘বন্ড... ডেভিড বন্ড!’ কিংবা ‘বন্ড... ক্রিশ্চিয়ানো বন্ড!’
৫ অক্টোবর দু’জনের এক জন হয়তো উপরের যে কোনও একটা নাম আওড়াবেন। যে দিন সম্ভবত এক অভূতপূর্ব টক্কর দেখবে লন্ডন। যে দিন জেমস বন্ডের গাড়ির দখল নিতে নিলামে দর হাঁকতে পারেন ডেভিড বেকহ্যাম এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বিশেষ সূত্রে অন্তত সে রকমই শোনা যাচ্ছে। বন্ড সিরিজের ‘কোয়ান্টাম অফ সোলেস’ ছবির গোড়াতেই ইতালির পাহাড়ি রাস্তায় এই ‘অ্যাস্টন মার্টিন ডিবিএস ভি১২’ গাড়িটি ছুটিয়েছিলেন বন্ড-বেশী ড্যানিয়েল ক্রেগ! সেই গাড়িকে নিলামে তুলেছে ব্রিটিশ নিলাম সংস্থা ‘ক্রিস্টিজ’। জেমস বন্ড ফিল্ম সিরিজের সুবর্ণজয়ন্তীর বছর এই ২০১২। ১৯৬২-র ৫ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল বন্ড সিরিজের প্রথম ছবি ‘ডঃ নো’। সেই উপলক্ষেই এই নিলাম। |
এবং সেই উপলক্ষেই বেকহ্যাম-রোনাল্ডো সম্ভাব্য দ্বৈরথ। ফুটবল বিশ্বে আগে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না জানা নেই, যেখানে সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলার নিলামের ময়দানে পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন। ‘বন্ড-কার’ স্রেফ একটা শব্দবন্ধের টানে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়ছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের দুই প্রাক্তন ৭ নম্বর জার্সি!
বন্ড-মাহাত্ম্য এখানেই। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর ম্যারাথন নিলামের আগাগোড়া জুড়ে শুধুই ‘০০৭’। শিরোনামেও তিনি ‘ফিফটি ইয়ার্স অফ জেমস বন্ড দ্য অকশন’। বন্ড-সিরিজের প্রযোজক সংস্থা ইওন প্রোডাকশনসের সঙ্গে ক্রিস্টিজের এই যৌথ উদ্যোগ। আগামী ২৬ অক্টোবর মুক্তি পেতে চলা ‘স্কাইফল’-সহ বন্ড সিরিজের মোট ২৩টা ছবির প্রত্যেকটি থেকেই কিছু না কিছু স্মারক তোলা হচ্ছে নিলামে পোশাক, পোস্টার, গয়না। এমন ৪০টা স্মারক নিয়ে মূল নিলামটা অনলাইনে। সাধারণ বন্ড অনুরাগীর কথা ভেবে সেখানে ন্যূনতম দর মাত্র ৫০ পাউন্ডও রাখা হয়েছে।
কিন্তু ৫ অক্টোবর তথা সুবর্ণজয়ন্তীর দিন সম্পূর্ণ অন্য আয়োজন। সে দিনের নিলামে অংশগ্রহণটাও আমন্ত্রণমূলক। ক্রিস্টিজের সাউথ কেনসিংটনের নিলামঘরে সে দিন নিলামে উঠবে বাছাই করা আরও ১০টা বন্ড-স্মারক। যার মধ্যে ‘সুপারস্টার’ এই গাড়ি। নিলামের টাকা যাবে দশটি দাতব্য সংস্থার তহবিলে। এই ‘বিশেষ আয়োজনেই’ বেকহ্যাম-রোনাল্ডো দর হাঁকবেন বলে খবর। নিলাম সংস্থার আশা, ১ থেকে দেড় লক্ষ পাউন্ডে বিক্রি হবে ‘বন্ড-কার’। |
বেকহ্যাম-রোনাল্ডো নিলামে সশরীরে হাজির থাকবেন কি না, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়। এই ব্যাপারটাকে কেউ তেমন পাত্তাও দিচ্ছে না। বরং সম্ভাব্য দ্বৈরথের খবরটাই যথেষ্ট তোলপাড় তুলে দিয়েছে। বিশেষ সূত্রটি একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে বলেছেন, “বেক্স (বেকহ্যাম) এক বিশাল বন্ড-ভক্ত। ও সব সময়েই চাইত বন্ড-ফিল্ম থেকে একটা জম্পেশ কিছু বাগাতে। গাড়িটা নিলামে উঠছে শুনে ও মরিয়া হয়ে উঠেছে। গাড়িটায় রোনাল্ডোরও চোখ রয়েছে। ও যদি দর হাঁকে, তা হলে বেক্স কিন্তু টক্করের মুখে পড়তে যাচ্ছে।”
শোনা যাচ্ছে, গাড়িটা কিনতে এখনই এক লক্ষ পাউন্ড খরচা করতে বেকহ্যাম তৈরি। এবং
৩৭ বছরের ব্রিটিশ তারকা তাঁর চেয়ে ১০ বছরের ছোট পর্তুগিজ প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে এখনও রোজগারের অঙ্কে এগিয়ে। ফোর্বস পত্রিকার গত এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ফুটবলার এখনও বেকহ্যাম, সে যতই তিনি ফুটবল জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে যান না কেন! বেকহ্যামের রোজগার এখনও বছরে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। তাঁর ঠিক পরেই রোনাল্ডো, ৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার। কাজেই নিলামে বাজি কে মারবেন, তা নিয়ে জমাটি তর্কের অবকাশ থাকছে।
আসলে স্রেফ গাড়ি নিয়ে পাগলামিতেও তো পাল্লা দেন দু’জনে! এই যেমন বেকহ্যাম সম্প্রতি তাঁর কয়েকটা গাড়ি নিলামে বেচে দিতে চাইছিলেন বলে শোনা যাচ্ছিল। সেই তালিকায় ছিল দু’টো বেন্টলে, একটা ল্যাম্বরগিনি, একটা বিএমডব্লিউ! রোনাল্ডোর আপাতত গোটা উনিশ গাড়ি। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলেন, এর মধ্যে কিছু গাড়ির নাম তিনি জীবনে প্রথম শোনেন ম্যাঞ্চেস্টারের নিয়মিত ফুটবলার হওয়ার পর। যখন তাঁর পারিশ্রমিকের অঙ্কে বেশ কয়েকটা ‘শূন্য’ জুড়ে গিয়েছে। পর্শে, ফেরারি, অডি, বেন্টলে-দের নিয়ে আজ তাঁর ‘সুখের সংসার’।
তবু ‘বন্ড-কার’-এর জাদুটাই আলাদা। সদ্যসমাপ্ত লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিন্তু ‘বন্ড’ ক্রেগ এবং বেকহ্যাম, দু’জনেই ছিলেন কুশীলব। সেই সন্ধ্যায় টেমসের বুকে বেকহ্যামের হাতে ছিল অলিম্পিকের মশালবাহী স্পিডবোটের স্টিয়ারিং। বন্ড ছিলেন রানির নিরাপত্তার দায়িত্বে।
এ বার স্পিডবোট নয়, বন্ড-কারের স্টিয়ারিং হাতে চান বেকহ্যাম। চান ক্রিশ্চিয়ানোও। তাই রোমাঞ্চের যাবতীয় মশলা নিয়ে তৈরি নির্ভুল বাঁকানো ফ্রি-কিক বনাম বিদ্যুৎগতির শৈল্পিক ড্রিবলের রুদ্ধশ্বাস চিত্রনাট্য! |