পুলিশি হানায় দলের কয়েক জন চাঁই ধরা পড়ার পর এ বার নয়া কারসাজি নিয়ে কলকাতায় ঢুকছে জালিয়াতেরা। শুক্রবার রাতে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে এটিএম জালিয়াতিতে অভিযুক্ত দুই যুবককে গ্রেফতার করার পর এমনটাই দাবি করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই যুবকের নাম মহম্মদ আজহারউদ্দিন এবং হারুণ শামস। বাড়ি বিহারের গয়া জেলার ফতেপুরে।
লালবাজার সূত্রের খবর, এটিএম জালিয়াতিতে দেশ জুড়েই গয়ার জালিয়াতদের কুখ্যাতি রয়েছে। পুলিশের খাতায়, তাঁদের পরিচয় ‘গয়া গ্যাং’ হিসেবেই। এক গোয়েন্দাকর্তার কথায়, এই জালিয়াতেরা ফন্দিফিকির করে এটিএম জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত। নিউ মার্কেট থেকে ধৃত যুবকেরাও এই ‘গ্যাংয়ের’ সদস্য বলেই তদন্তকারীদের দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের অন্যান্য অপরাধের যোগসূত্রও রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এত দিন তাঁরা এটিএম মেশিনের কি-বোর্ডের বিশেষ দু’টি বোতামের তলায় আঠা লাগিয়ে চেপে দিত। কিন্তু সেই কারসাজি পুলিশ জেনে ফেলায় এ বার কাঠি ব্যবহার করছে তারা।
ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, এটিএম মেশিনের বোতামে আঠা লাগানোর বদলে এ বার কাঠি গুঁজে দিচ্ছে জালিয়াতেরা। ছোট-সরু দু’টি কাঠির টুকরো বোতামের তলায় গুঁজে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত ধৃতদের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট, যাদবপুর এবং ডালহৌসি এলাকায় এটিএম জালিয়াতির অভিযোগ মিলেছে। শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালত ধৃতদের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, আঠা দিয়ে বোতাম দু’টোকে অকেজো করে দেওয়া হলে সাধারণ গ্রাহক সেই মেশিনে কার্ড ঢুকিয়ে পাসওয়ার্ড (এটিএম পিন) দেওয়ার পরই মেশিনটি বিগড়ে যেত। মেশিন খারাপ ভেবে গ্রাহক বেরিয়ে যেতেই জালিয়াতেরা আঠা তুলে দিত। পুলিশ বলছে, ওই আঠা তুলে দিলেই ফের মেশিনটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং ওই গ্রাহক কার্ড বের করে নিয়ে চলে গেলেও তার কার্ডের তথ্য এবং ‘পিন’ সেই মেশিনে রয়ে যেত। এর পর মেশিনটি সক্রিয় হয়ে গেলেই এটিএম কাউন্টারের বাইরে অপেক্ষায় থাকা জালিয়াতেরা সেই মেশিন ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিত। কাঠি দিয়েও একই রকম কায়দায় টাকা সাফাই করছে দুষ্কৃতীরা। তদন্তকারীরা বলছেন, পর পর কয়েকটি ঘটনায় ‘গয়া গ্যাংয়ের’ কয়েক জন চাঁই ধরা পড়ে। পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে যায় তাঁদের কলা-কৌশল। আজহারউদ্দিন এবং হারুণকে গ্রেফতার করার পর দেখা গিয়েছে, কারসাজিতে বদল আনছে এটিএএম জালিয়াতেরা। পুলিশ মনে করছে, আঠা লাগানো এবং তোলা অনেক বেশি ঝঞ্ঝাটের। তার উপরে কারসাজি ফাঁস হওয়ায় বোতামের গায়ে লেগে থাকা আঠার দাগ দেখে পুলিশ দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে ফেলত সহজেই।
তা হলে তো এই কারসাজির বদলে গোয়েন্দাদের দাপটেরও পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে! এরই প্রেক্ষিতে লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, “পুলিশে ধরলে বুদ্ধি বাড়ে।” |