অবরোধ-বৃষ্টি-মিছিল, ওই ত্র্যহস্পর্শে শনিবারের বারবেলায় থমকে গেল মহানগরীর গতি।
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সকাল থেকে মধ্য কলকাতা-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বিজেপি সমর্থকেরা। তার জেরে সপ্তাহের শেষ কাজের দিনে সাতসকালেই অফিসমুখো জনতাকে নাকাল হতে হয়।
সকাল দশটা নাগাদ বেলেঘাটা অবরোধ শুরু করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর্থকেরা। একে একে আটকে দেওয়া হয় বৌবাজার মোড়, মেছুয়া-সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের মোড়, ধর্মতলার মোড়, মানিকতলা, গড়িয়াহাটের মোড়। বিজেপি সমর্থকেরা অবরোধ করেন একবালপুর-সহ বন্দর এলাকার বিভিন্ন রাস্তা। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং গড়িয়াহাট, ধর্মতলা মোড় আটকে দেওয়ায় উত্তর এবং দক্ষিণ, সর্বত্রই যান চলাচল
বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। উত্তরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সিঁথি মোড় পর্যন্ত। দক্ষিণেও ভবানীপুর, টালিগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত গাড়ি আটকে পড়ে। অনেক অফিসযাত্রীই মাঝপথে বাস-ট্যাক্সি ছেড়ে মেট্রো ধরে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। |
কেউ কেউ বা ঠায় অপেক্ষা করেছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য।
পুলিশ জানিয়েছে, পরের পর একাধিক জায়গায় অবরোধ হতে থাকায় গোটা শহরের যান-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থমকে যায়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই মুষলধারে বৃষ্টি। পুরসভা জানিয়েছে, এ দিন উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণেই সাদার্ন অ্যাভিনিউ, চেতলা, মাঝেরহাট সেতু, পার্ক সার্কাস, আলিপুর এলাকায় জল জমে। জল জমে গিয়েছিল ঢাকুরিয়ায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও। পুর কর্তৃপক্ষের হিসেবে, এ দিন সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চেতলা লক গেট এলাকায়, ১১০ মিলিমিটার। ১০০ মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টি হয়েছে যোধপুর পার্ক, কালীঘাট, সার্দান অ্যাভিনিউ এলাকায়। পুরসভার মেয়র-পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার ফলেই জল জমে গিয়েছিল। তবে, পাম্প চালিয়ে জল বের করে দেওয়া হয়েছে।” বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বারবারই বলেছেন, মহানগরীর আকৃতি গামলার মতো হওয়ায় জল জমাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই জল যাতে দ্রুত বের করে দেওয়া যায়, সে দিকেই লক্ষ্য রাখা উচিত। রাজীববাবু জানিয়েছেন, পাম্প চালানো হলেও নিকাশি নালায় জঞ্জাল জমে থাকার ফলেও কিছু এলাকায় জল দাঁড়িয়েছিল।
দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যাওয়ায় ফের যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে
পড়ে শহর। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, জল জমে যাওয়ায় এলগিন রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, বেলভেডিয়ার রোডে গাড়ি-ঘোড়া আটকে পড়ে। হাঁটু জল জমে যায় গড়িয়াহাট, ভবানীপুর এলাকায়।
অবরোধ-বৃষ্টি তো ছিল-ই, বিকেলে শহরবাসীকে নাজেহাল হতে হল শাসক দলের মিছিলের জন্য। পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি তোলা এবং খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্রের বিরুদ্ধে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে গাঁধী মূর্তি পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। নেতৃত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়-সহ তৃণমূলের উচ্চনেতারাও।
পুলিশের হিসেবে, এ দিনের মিছিলে হাজার চারেক লোকের ভিড় হয়েছে। যা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের তুলনায় কম। কিন্তু দিন সকাল থেকে যে পরিস্থিতি ছিল, তার জেরে ওই মিছিলেই মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফের
যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা চত্বরে যানজট তৈরি হয়েছে। রাতের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে পুলিশের দাবি। |