মার্কিন প্রযোজনার ‘ইসলাম-বিরোধী’ ফিল্মের ভিডিও ইউটিউব থেকে সরানো হবে না বলে জানাল গুগ্ল। ওই ফিল্মে হজরত মহম্মদকে অসম্মান করা হয়েছে, এই অভিযোগে মার্কিন-বিরোধী হিংসা ছড়িয়েছে প্রায় কুড়িটি দেশে। এ দিন নতুন গোলমাল হয়েছে সুদান, তিউনিসিয়া এমনকী অস্ট্রেলিয়াতেও। তার জেরেই ওবামা-প্রশাসনের তরফে ইউটিউবের স্বত্বাধিকারী গুগ্লকে অনুরোধ করা হয়েছিল ভিডিওটির বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে। কিন্তু গুগ্ল জানিয়েছে, ভিডিওটি তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারের নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।
তবে, ভিডিওটি সরাতে অস্বীকার করলেও ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ায় সেটি দেখা যাবে না বলে জানিয়েছে গুগ্ল। প্রসঙ্গত, ফিল্মটি নিয়ে গোলমালে বুধবার লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রাণ হারানোর পর মিশর এবং লিবিয়ায় সে দিনই সেটির ইউটিউব সম্প্রচার বন্ধ হয়েছিল। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত মোট ৪টি দেশে ভিডিওটি ‘ব্লক’ করা হয়েছে। কেন? ইউটিউব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার সরকার এই মর্মে অনুরোধ জানিয়েছে। কারণ ওই দেশগুলির আইন অনুযায়ী ভিডিওটি ‘বিদ্বেষমূলক’। লিবিয়া ও মিশরের পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘উদ্বেগজনক’। তাই ওই চারটি দেশে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক চাপে তারা এই পদক্ষেপ করেনি। তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারের জন্য ২০০৭-এ যে নিয়ম তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই সিদ্ধান্ত।
বিতর্কিত ফিল্মটিকে কেন্দ্র করে এখনও হিংসা অব্যাহত। শনিবার মার্কিন-বিরোধী বিক্ষোভ ছড়াল অস্ট্রেলিয়াতেও। সিডনিতে মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে শ’খানেক বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। ঘটনায় এক পুলিশ অফিসার-সহ চার জন আহত হয়েছেন। ফিল্মের ‘প্রতিবাদে’ আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশে ন্যাটো-র সব চেয়ে বড় ঘাঁটিতে তালিবান হামলা চালিয়েছে। ওই ঘাঁটিতেই রয়েছেন ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি। শুক্রবার তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলায় নিহত হয়েছিলেন দু’জন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। সুদানের রাজধানী খার্তুমে জার্মান এবং ব্রিটিশ দূতাবাসে ঢুকে পড়ে এক দল বিক্ষোভকারী। তবে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। এ অবস্থায় পশ্চিম এশিয়ায় সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য লেবানন গিয়েছেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। হামলা নিয়ে শনিবার মুখ খুলেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট দেশগুলি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে না পারলে আমেরিকাকেই যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে।”
কেন এই হামলার লক্ষ্য প্রধানত মার্কিন দূতাবাস, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিউ ইয়র্কের বিদেশনীতির বিশেষজ্ঞ এড হুসেন। তাঁর কথায়, “যে দেশগুলিতে হামলা মারাত্মক আকার নিয়েছে, সেখানে সরকারি অনুমোদন ছাড়া ফিল্ম মুক্তি পায় না। তাই বিক্ষোভকারীদের ধারণা, ওবামা-প্রশাসনের সম্মতি ছাড়া এমন একটা ফিল্ম বাজারে আসতেই পারত না। গোটা বিষয়টার জন্য তাই মার্কিন প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা।” হোয়াইট হাউস অবশ্য ছবিটির বিষয়বস্তুর নিন্দা করলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এর জন্য মার্কিন প্রশাসন ক্ষমা চাইবে না। |