সংস্কৃতি যেখানে যেমন..

সুরের ফেরিওয়ালার একক অনুষ্ঠান
কঠোর পরিশ্রম, নিরলস অধ্যাবসায় এবং একাগ্রতা যে মানুষকে কোথায় পৌঁছে দেয় তার উদাহারণ দেবপ্রতিম রায়। ছেলেবেলা থেকে রাগপ্রধান সঙ্গীত তাঁর মনকে ছুঁয়ে যেত। ওই সঙ্গীতের টানে ছাত্র অবস্থায় সেতার হাতে নিয়ে সোজা পণ্ডিত অপরেশ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে চলে যান। শুরু হয় তালিম। তারের উপরে আঙ্গুল বুলিয়ে সুর সৃষ্টি হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের ব্রত। রাগের ঘনঘটায় ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরলেন। শুরু হল নতুন পথ চলা। যন্ত্র সঙ্গীতে দেবপ্রতিম রায় খুঁজে পেলেন রাগে রাগে পথ চলার আবেশ। তখন সমবয়সী বন্ধুরা সাম্মানিক ডিগ্রির জন্য পড়তে ব্যস্ত। এখানেই ব্যতিক্রমী দেবপ্রতিম। তিনি যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। অবলীলায় ছিনিয়ে নিলেন সর্বোচ্চ নম্বর। জাতীয় স্কলারশিপ নিয়ে পাশ করলেন ‘ব্যাচেলার ইন ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক’। শিল্পীর মন সুরের ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে নিতে চায় আরও নতুন পথ। তাই এম মিউজিক ডিগ্রি নিলেন। ইউজিসির গ্রান্ট নিয়ে ‘সাইকোলজি অব মিউজিক’ বিষয়ে টানা দু’বছর ধরে তিনি গবেষণা করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। এর পরে ‘মাইহার’ ঘরানায় সুরের জালবিস্তার করলেন সরোদে। সেতারে শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায় এবং পণ্ডিত ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের শিক্ষায় আরও উন্নত হলেন। পণ্ডিত সন্তোষ পণ্ডিতের হাত ধরে সেনি ঘরানাতেও দক্ষ হলেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সঙ্গে আধুনিকতার যে মেলবন্ধন তিনি ঘটালেন তা রাগ সঙ্গীতের জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
এখানেই দেবপ্রতিমের কৃতিত্ব। সম্প্রতি এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে ‘অর্গানাইজেশন অফ ইউনিভার্সাল মিউজিকের’ অনুষ্ঠান দেবপ্রতিমের সেতারের রিনিঝিনি ঝঙ্কার শুনে মুগ্ধ হয়েছে শ্রোতারা। সুরে সুরে পথ চলাতে যার আনন্দ তাঁকে থামানো যাবে না। রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের লোকরঞ্জন শাখায় সেতারবাদক শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে বেশিদিন থাকেননি। তিনি এ বার যোগ দিলেন শিলিগুড়ি আকাশবাণীতে। ১৩টি পর্বে ‘এসো রাগ চিনি’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তবু মন চায়নি ঘরে স্থিতু হতে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছেন। বারণসীর ‘সঙ্কট মোচন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বারাণসীবাসীর হৃদয় জয় করেন। আকাশবাণীর ২১ বছর কর্মজীবনে তিনি শ্রোতাদের জন্য রকমারি উপহার সাজিয়েছেন। জাতীয় সঙ্গীতকে ঘিরে তাঁর রূপক রচনা অমৃতস্য পুত্রাঃ, সঙ্গীত রূপক এসো মা আনন্দময়ী, পরমা-পরমেশ্বরী, বারবার এসো ফিরে, নীল আকাশের আলো উল্লেখযোগ্য। এক ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে বিচরণ করেও শান্ত হতে পারেননি। এক সময় ডুব দেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সাগরে। সংকলন করেন অরূপ তোমার বাণী, তোমারই রণনে, প্রেমঘন বরিষণে। দেবপ্রতিম ছুটে চলেছেন মুক্তোর খোঁজে। কান পাতলে শোনা যায় আলাপ— মিয়াঁ কি মল্লার, রূপক তালে রাগ মেঘে গৎ, মিশ্র খাম্বাজে— মনে রবে কিনা আমারে।

‘সাহানা’-র মনোজ্ঞ সন্ধ্যা
২৪ অগস্ট ‘সাহানা’ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিলিগুড়ির উদ্যোগে দীনবন্ধু মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল মনোজ্ঞ রবীন্দ্র কেন্দ্রীক অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি সাহুডাঙ্গির শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমের পক্ষ থেকে স্বামী জীবানন্দ, প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অশ্রুকুমার শিকদার, অধ্যক্ষা সুমিতা মজুমদারের উপস্থিতিতে মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বেদ গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সঙ্গীত ও শিল্পকলা চর্চা ছাড়াও ‘সাহানা’ কিছু সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ও সে জন্য সাহুডাঙির আশ্রমের উন্নয়ন স্বার্থে সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয় স্বামী জীবনানন্দের হাতে। অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশিত হয় আলেখ্য ‘সুগভীর পরশে’। গুরুদেবের ঈশ্বর ভাবনা প্রকাশের বিভিন্ন রূপ নিয়ে সাজানো আলেখ্যটিতে একত্রে ২৬ জনের সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিবেশ বদলে দেয়। ছয়টি গান ও ভাষ্য সহযোগে নিবদ্ধ আলেখ্যটি পরিবেশনের মধ্যে ছিল নিখুঁত পেশাদারিত্ব ও বিশুদ্ধ শিক্ষণের সমন্বয়। স্বাদবদলের পালা- ছোটদের পরিবেশিত রবীন্দ্রনাথের হাস্যকৌতুক ‘রোগের চিকিৎসা’ শুনে স্রোতা-দর্শকদের হাসিতে প্রেক্ষাগৃহ ভরে ওঠে। সাহানার কর্মসূচি অনুসারে প্রতি অনুষ্ঠানেই কোনও না কোনও নবীন শিল্পীদের সুযোগ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার প্রতিফলন এবারের নিবেদনে।
সুজিত বিশ্বাস পরিচালিত ‘সুরেলা’ বেহালা শিক্ষণ কেন্দ্রের আমন্ত্রিত অতিথিদের সমবেত বেহালা বাদন। নবীন শিল্পীদের বেহালায় রবীন্দ্র সুর অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ করে। সন্ধ্যার সর্বশেষ ও প্রধান আকর্ষণ ‘বর্ষামঙ্গল’। এ শহরে প্রথমবার বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠিত হতে দেখা গেল। বর্ষার সামগ্রিক রূপের সাথে মানব প্রেমের যে মিল তা তুলে ধরা হয় ‘বর্ষামঙ্গল’-এ নিবাচিত গান ও কবিতার মাধ্যমে। অধ্যক্ষা সুমিতা মজুমদারের পরিচালনায় নবীন গায়ক-গায়িকাদের একক ও সমবেত গান শুনে স্রোতারা আপ্লুত হয়ে ওঠে। সমগ্র অনুষ্ঠানের আবেদন ও আন্তরিকতা নজরকাড়া। সুপরিকল্পিত মঞ্চসজ্জায় প্রাকৃতিক সবুজের ব্যবহার ভরা ভাদ্রের বাস্তব রূপকে ফোটাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। পরিকল্পনা ও নিয়মানুবর্তিতার এমন সাবলীলতা সচরাচর লক্ষ্য করা যায় না। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অতনু চৌধুরী এবং পরিচালনায় ছিলেন সুমিতা মজুমদার।

‘মেজকাকিমার গল্প’ রাঁচিতেও
মেজকাকিমার হরেক কাণ্ড। সারা দিন বকবক করে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ট্যাঁকে গুঁজে তাঁর প্রিয় রেডিও। সবাই জেরবার। তার বোনের মেয়ে নীতা। মেয়ে বুলু শুধু প্রশ্রয় পান তার বিধবা পুত্রবধুর কাছে। কখনও বুলুর পাঠানো নাটকের টিকিটের পিছনে দোকানের ফর্দ লিখে সেটি মুদির দোকানে পাঠাচ্ছেন। কখনও সেলস গার্লদের ঘরে জোর করে বসিয়ে খাইয়ে-দাইয়ে গল্প করে জিনিস কিনে ছাড়ছেন। রিকশাওয়ালা উল্টে পড়া থেকে পাড়ার মোড়ে গোলমাল কিছু ঘটলেই পরনের শাড়িটা অপয়া বলে বাতিল করে দিচ্ছেন। সেকেন্ডারি পরীক্ষার ঠিক আগে আদরের ছটপটে নাতনির হাতে একতারা দিয়ে তাকে বাউল হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আর সারাক্ষণ রেডিওর খবর শুনে সকলকে সতর্ক করে যাচ্ছেন। তাঁর সতর্কবার্তায় চিনের বন্যা আমেরিকার ঝড়ের খবর। এ সব তাঁর পাগলামো? এর পিছনে লুকিয়ে থাকা ভালবাসার কথা ধ্বংস আর বাউল গানে, হানাহানির মাঝে বাউল গানে, পিট সিগারের গানে, মৌসুমী মজুমদার, নবনীতা দেব সেনের গল্প থেকে খুঁজে নিতে চেয়েছেন যেন সেই চিরন্তন শান্তি আর প্রেমের পথটি। গত ৫ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়ির আর্ট কমপ্লেক্সে মঞ্চস্থ হল ‘চিত্তপট’-এর ‘মেজকাকিমার গল্প’। আরাত্রিকা গুহরায়, ডালিয়া রায়চৌধুরী, মৌসুমী মজুমদার, রূপালী দাস, শান্তা সরকার, অদ্রিজা রায়চৌধুরী, পিয়ালী গুহ রায়, রূপকথা দাস, দুর্বার শর্মার অভিনয়ে জমাট হয় গল্পের আসর। শান্তনু মজুমদারের বিষয়ানুগ আবহ সৃজন এবং অংশুমান মুখোপাধ্যায়ের ধ্বনি মিশ্রণ, অমিয় সাহার আলো। গীতমালার ধ্বনি প্রক্ষেপণ, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রূপসজ্জা, মৌসুমী মজুমদারের মঞ্চ পরিকল্পনা, দেবদূত পালের মঞ্চ নির্মাণ, রাজদীপ রায় ও জয়শীলা গুহর ভাষ্যে ঝলমলে হয়ে ওঠে নাটক। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাঁচির ‘মজলিস’ -এর আমন্ত্রণে তাদের নাট্যোৎসবে পরিবেশিত হয়।

কৃষ্টির ১১তম অধিবেশন
মালদহের বৈষ্ণবনগরে অনুষ্ঠিত হল ‘কৃষ্টির’ একাদশ অধিবেশন। গত ২ সেপ্টেম্বর সঙ্গীত ও স্বরচিত লেখা পাঠে মুখরিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রতিকান্ত দাস। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৌলমী সরকার। এ ছাড়াও সঙ্গীতে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, ববিতা সরকার, শিখা লালা, শ্রেয়শ্রী দাস, অমৃতা সিংহ প্রমুখ। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন চন্দন মণ্ডল, তানিয়া রহমত, হরিসাধন মণ্ডল। তবলায় ছিলেন দেবাশিস ঠাকুর, চিন্ময় সরকার ও রূপম তেওয়ারি। ছিল নৃত্য ও স্বরচিত প্রবন্ধ পাঠ। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ে আলোচনা করেন সত্য চৌধুরী। স্থানীয় বিশিষ্টরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

দীনবন্ধু মঞ্চে মননে-সৃজনে
উত্তরবঙ্গে আবৃত্তি ও সংযোজনার জগতে অনেক দিন ধরেই তিনি স্বচ্ছন্দ। কবিতা লেখার সুবাদেও উত্তরের সাংস্কৃতিক দুনিয়ায় পরিচিত নাম পারমিতা দাশগুপ্তের। এ বার তাঁর উদ্যোগে তৈরি সংস্থা ‘উবাচ’-এর প্রথম বাচনিক-নান্দনিক প্রয়াস হতে চলেছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ওই অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ‘মননে-সৃজনে’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে থাকবে আবৃত্তির কোলাজ, শ্রুতি নাটক, রবীন্দ্র ভাবনায় গীতি আলেখ্যও। এতে অংশগ্রহণ করবেন ৪০ জন। ওই দিন সংস্থার তরফে হায়দরপাড়া বুদ্ধভারতী স্কুলের বাছাই পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

স্মরণ
ময়নাগুড়ি বিজলী সঙ্ঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকার্ন্ত স্মরণে ৩৩ তম ত্রয়ীপ্রণাম উৎসব। ৮-৯ সেপ্টেম্বর সঙ্ঘ গৃহ ও রবিতীর্থ ভবনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.