বাউল গান করেন সমীরণ অধিকারী। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানা এলাকায় বাড়ি। গান গাইতে প্যারিস যাওয়ার কথা। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন ছ’মাস আগে। এখনও পাননি। বললেন, “সুযোগ এসেছে। সময়মতো পাসপোর্ট না-পেলে বাকিরা চলে যাবে। আমার আর যাওয়া হবে না।”
কেন এই অবস্থা? পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য ঘটা করে ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা চালু হল। প্রথমে কলকাতা, পরে বহরমপুরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (পিএসকে) চালু হল। আবেদনকারীরা যাতে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পান, সেই জন্যই তো এত ব্যবস্থা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন নজরে আসছে না। কেন?
পাসপোর্ট দফতর সূত্রের খবর, সেখানে লোকবল কম। পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দফতরের অফিসার-কর্মীরা। কোনও কোনও সপ্তাহে অতিরিক্ত কাজ করেও জমে ওঠা আবেদনের নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। সময়মতো পাসপোর্ট মিলছে না।
পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাহায্য লাগে পুলিশের। কিন্তু কর্মীর অভাব সেখানেও। পুলিশে প্রচুর পদ খালি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দৈনন্দিন কাজ সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে জেলা পুলিশ। পাসপোর্ট সংক্রান্ত তদন্ত বা খোঁজখবরের ফাইল জমে থাকছে দীর্ঘদিন।
পাসপোর্ট দফতরের দাবি, তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় আবেদন করার সাত দিনের মধ্যেই। অথচ ছ’মাস আগে আবেদন করা সত্ত্বেও বাউলশিল্পী সমীরণবাবুর বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল পুলিশ মাত্র দিন দশেক আগে। তদন্ত করে তথ্য নিয়ে পুলিশ তাঁকে বলে গিয়েছে, পাসপোর্ট পেতে আরও দেড় মাস লাগবে।
একা সমীরণবাবু নন। আবেদন করার পরে দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্টের আশায় বসে আছেন রাজ্যের বহু মানুষ। পাসপোর্ট পেতে গেলে পুলিশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। এখন জেলা পুলিশের সেই ছাড়পত্র পেতে সময় লাগে গড়ে তিন মাস। কেননা পুরো পদ্ধতিটাই সময়সাপেক্ষ।
কলকাতা থেকে ডাকযোগে ছাড়পত্রের আবেদন পাঠানো হয় জেলায়। তদন্তের পরে পুলিশের রিপোর্ট ডাকযোগেই ফিরে আসে শহরে।
পাসপোর্ট দফতর ও পুলিশে লোকাভাবের সমস্যার মধ্যে আশার খবর একটাই। ছাড়পত্র দিতে সময় যাতে কম লাগে, সেই জন্য এই মাসেই জেলা পুলিশে ‘অনলাইন ভেরিফিকেশন’-এর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এলাকায় আগেই এটা চালু হয়েছে। তামিলনাড়ু ‘মডেল’ অনুসরণ করে এ বার জেলার ক্ষেত্রেও কম্পিউটার মারফত অনলাইনে দেওয়া-নেওয়া হবে সেই ছাড়পত্র। পুলিশি সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরে বিধাননগর ও হাওড়া কমিশনারেট, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। আলাদা ভাবে এই কাজের ভার দেওয়া হচ্ছে কিছু পুলিশকর্মীকে।
তাতে আবার অন্য সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। তাঁরা বলছেন, একেই তো লোকবল কম। তার উপরে কিছু কর্মীকে পাসপোর্টের কাজের ভার দেওয়ায় জেলা পুলিশের উপরে চাপ বাড়বে।
রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার আর শিবকুমার জানান, ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতার পিএসকে-তে অনলাইনে পাসপোর্টের কাজের জন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আলাদা কেন্দ্র তৈরি হবে জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে। আবেদনকারীদের তথ্য কম্পিউটার মারফত সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তদন্ত করে পুলিশ আবার অনলাইনেই রিপোর্ট পাঠাবে পাসপোর্ট দফতরে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অনলাইন ব্যবস্থায় অন্তত ১৫ দিন সময় বাঁচবে।” যে-ক’টি রাজ্যে এই ব্যবস্থায় সময় বাঁচছে, তাদের মধ্যে তামিলনাড়ু অগ্রগণ্য।
সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের প্রতিনিধিরা তামিলনাড়ু গিয়ে তাদের কাজকর্ম দেখে এসেছেন। ডিসেম্বরের আগে রাজ্যের পাঁচটি কমিশনারেট এবং ১৪টি জেলায় এই ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হবে বলে পুলিশের দাবি। |