উত্তর কলকাতা
সৌন্দর্যায়নে বাধা
চক্রাকারে নরক
কুমোরটুলি ঘাট থেকে শুরু করে নিমতলা ঘাট। উত্তর কলকাতার স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। এই রাস্তায় চক্ররেলের লাইনের পাশেই কালো-নীল-সাদা প্লাস্টিকের চাদরে ঢাকা রয়েছে পিচবোর্ডের বাক্স। কোথাও কোথাও ডাঁই করে রাখা আছে চটের বস্তা। লাইনের দু’পাশে ঝুপড়ি তৈরি করে গজিয়ে উঠেছে বসতিও। ট্রেন লাইনের পাশে গোটা এলাকাটাই আবর্জনায় ভরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের নিত্য নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে গঙ্গার ধারের সৌন্দর্যায়নের কাজও। এই দখলদারদের সরানো নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
কলকাতা পুরসভা এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ, উভয়েই জানান, গঙ্গার ধারের ঘাটের সংস্কারের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কাজও চলছে। এ ছাড়াও, পরিকল্পনামাফিক গঙ্গার ধারের রাস্তায় নানা ধরনের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও আশপাশের আবর্জনার জন্য এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, রেললাইনে বসে থাকা ঝুপড়িবাসীদের না সরালে এই প্রকল্প অনেক ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যাবে।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের এই অংশে কিছু দিন আগেই বেশ কিছু নতুন গাছের চারা লাগানো হয়েছিল। সেগুলি সবই উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে এই বিভাগের অভিযোগ। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালী সাহা বলেন, “কুমোরটুলি এলাকায় গঙ্গার ধারে যে কটি গাছের চারা বসানো হয়েছিল তার প্রায় বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধ ও আবর্জনার জন্য ট্রেন লাইনের পাশে হাঁটাও সমস্যা। লাইনের পাশেই বেআইনি ভাবে ডাঁই করে রাখা আছে পিচবোর্ডের বাক্স সমেত নানা সামগ্রী। এই জমিতেই চলছে বেআইনি গোডাউনের ব্যবসা।”
রেললাইনের দু’ধারে অরক্ষিত জায়গা কোনও কোনও ব্যবসায়ী তাঁদের মালপত্র রাখার জন্য ব্যবহার করেন। এই ব্যবসায় টাকার লেনদেন হয় বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। এই গুদামে মালপত্র রাখতে অথবা এখান থেকে নিয়ে যেতে সব সময়েই গঙ্গার ধারে লরি বা ম্যাটাডর আসা-যাওয়া করে। সেগুলির চালক বা খালাসিরাও গঙ্গার আশপাশের অঞ্চল নোংরা করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার লাইনের ধারে ঝুপড়ি করে বসবাস করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলাকার বাসিন্দা রেবন্ত ঘোষ বলেন, “রেললাইনের ধারের এই জমি জবরদখল হওয়ার ফলেই এলাকায় যত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। লাইনের ধারে মূলত যে বাড়িগুলি রয়েছে সেগুলির সমস্যা বেশি। জবরদখল এই জমিতে বেআইনি গুদামের ব্যবসা বন্ধ করতে পারলে এবং গঙ্গার ধারে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করতে পারলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।” স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজার কথায়: “গঙ্গার ধারে রেলের জমি জবরদখল আমার এলাকার একটি বড় সমস্যা। রেল, বন্দর, পুলিশ, সবার সঙ্গে বসেই এই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে দ্রুত আলোচনা করব।”
এই ঝুপড়িবাসীদের সরানো এবং এই জায়গা জবরদখল করে ব্যবসা বন্ধ করবে কে?
পুর এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গঙ্গার ধারে রেলের জমিই যেহেতু ঝুপড়িবাসীরা বেদখল করেছেন সে হেতু রেল কর্তৃপক্ষকেই এই ব্যবস্থা নিতে হবে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান বলেন, “যেহেতু জবরদখলকারীরা রেলের জমি জবরদখল করেছে তাই রেল কর্তৃপক্ষ না বলা পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।” পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলে সার্কুলার রেলের জমি থেকে বেআইনি দখল সরাতে পুলিশকে জানানো হবে।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.