খেলা
দারিদ্র নক আউট
ভাবের পরিবার। কিন্তু লড়াই থামেনি। এ বারেও রাজ্য জুনিয়র বক্সিংয়ে সোনা জিতল শিবপুরের মনোজ সাউ, দুর্গাপুরের রাজেশ রাম কিংবা খিদিরপুরের শেখ যাদব আলম। সম্প্রতি হাওড়া ময়দানে ওয়েস্ট এন্ড ক্লাব আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে হারিয়ে সেরা দলের খেতাব জিতল খিদিরপুর স্কুল অফ ফিজিক্যাল কালচার।
কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী মহম্মদ আলি কামারের ক্লাবে খিদিরপুর স্কুল অফ ফিজিক্যাল কালচার-এর ১৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ১০ জনই ফাইনালে ওঠেন। ৭টি সোনা আর ৩টি রুপো জিতে ৩৭ পয়েন্ট পেয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে দেন মহম্মদ সামিম, আসরাফ হোসেনরা। ‘এ’ বিভাগে ৪৪-৪৬ কেজি বিভাগে সোনা জিতে সেরা হন সামিম। বাবার তেলেভাজার দোকান। ‘ডি’ বিভাগে ৩৪-৩৬ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন শেখ যাদব আলম।
আয়োজক ক্লাবের প্রদীপ ঘিমিরি, ভীম সেন থাপারা সফল হলেও ২৮ পয়েন্ট পায় হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রতিযোগীরা। এই দলের বক্সাররা শিবপুর পুলিশ লাইনে কোচ তপন বসুর কাছে অনুশীলন করেন। এ বার নিয়ে টানা তিন বার রাজ্য বক্সিংয়ে সোনা জিতল রচিত রাউত। সোনা এ বার এল ‘বি’ ক্যাটেগরিতে ৩৪-৩৬ কেজি বিভাগে। সোনাজয়ী মনোজ সাউয়ের বাবা রিকশা চালান। আর এক সোনা জিতে নেওয়া বক্সার সুরকুমার রাউতের বাবাও গাড়িচালক। সহকারী কোচ কৃষ্ণ রাউত বললেন, “অধিকাংশই গরিব। সরঞ্জাম তো দূর, ভাল খাওয়ায় সুযোগ নেই। তবুও ওরা লড়ে যাচ্ছে।”
ছবি: রণজিৎ নন্দী
দুর্গাপুর থেকে আসা খুদে বক্সারদের মুখেও শোনা গেল সেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা। এ বার নিয়ে দু’বার রাজ্য সেরা হন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া রাজেশ রাম। অলিম্পিক বক্সার বিজেন্দ্র সিংহের ভক্ত রাজেশ বলল, “বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ভাল জুতো, গ্লাভস কিনব কী ভাবে?” দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন থেকে আসা আর এক সোনাজয়ী বক্সার সুনীল রামের বাবা ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। বক্সার মেরি কমের সাফল্যে উৎসাহী সুনীলেরও টানাটানির সংসার। কোচ সুরজ রায় বললেন, “৪০ জন শিক্ষার্থী। একটা গ্লাভস আর প্যাড নিয়ে অনুশীলন চালাই। অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছে।”
এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ১১০ জন বক্সার। চারটি বিভাগে মোট ২৪টি বডিওয়েটে লড়াই হয়। ওয়েস্ট এন্ড ক্লাব হাওড়ার একটি পুরনো বক্সিং চর্চা কেন্দ্র। আয়োজক ক্লাবের সভাপতি নিমাই দত্ত বললেন, “এখানে নিয়মিত বক্সিং চর্চা হলেও রিঙের উপরে ছাউনি নেই।” ক্লাব সচিব অসীম দাস বললেন, “এ বার মেয়েদের বক্সিং চর্চায় জোর দিতে চাই। মেরি কমের সাফল্য দেখে মেয়েদের মধ্যে বক্সিং নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।” উঠতি বক্সার প্রিয়াঙ্কা মাঝি বললেন, “অনুশীলনের জন্য মহিলা বক্সার পাই না। মেয়েরা এ বার বেশি করে বক্সিংয়ে আসুক।”
ফাইনালে রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়, বেঙ্গল অ্যামেচার বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সচিব দিলীপ পাল, বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হীরালাল মণ্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.