চাপানউতোর
খন্দে ভবিষ্যৎ
তিনটি শারদোৎসব চলে গিয়েছে। আর একটি দোরগোড়ায়। কিন্তু এ বারও ভাঙাচোরা রাস্তা ধরেই পুজো দেখতে যেতে হবে হাওড়া পুরসভার ছ’টি ওয়ার্ডের কয়েক লক্ষ বাসিন্দাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত চার বছর ধরে হাওড়া পুরসভার ৪৫ থেকে ৫০ এই ছ’টি ওয়ার্ডের ১১৭ কিলোমিটার রাস্তার খারাপ অবস্থা। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্য সরকারের নানা দফতর ও হাওড়া পুরসভার চাপানউতোরে রাস্তার এই দশা।
‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পে ২০০৮ থেকে হাওড়া পুরসভার এই ছ’টি ওয়ার্ডে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দায়িত্ব পায় ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি’ (কেএমডব্লিউএসএ)। বাকসাড়া, ধাড়সা, জগাছা, মৌলালি, বালিটিকুরি, দাশনগর-কোনা প্রভৃতি এলাকায় অলিগলি এবং বড় রাস্তায় পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়। খরচ ধরা হয়েছিল ৯৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকার দেয় ৫৫ শতাংশ টাকা। বাকি ১০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা পুরসভার।
মহিয়াড়ি
২০১০-এর মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু, আজও কাজ শেষ হয়নি।
কেন?
এই প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর এবং হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, শুরুতে প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ৯৩ কোটি টাকা। খোঁড়া রাস্তা সারিয়ে দেওয়ার কথা ছিল পুরসভার। কিন্তু পাইপ বসাতে ও ওভারহেড জলাধার তৈরিতেই ৯৩ কোটি টাকা খরচ করে ফেলে কেএমডব্লিউএসএ। ঝামা ইট আর বালি ফেলে কোনও রকমে মেরামতি করে এই সংস্থা।
বর্ষায় রাস্তাগুলির ইট উঠে গিয়ে অসংখ্য খানাখন্দ, গর্ত তৈরি হয়েছে। হাঁটাই দায়। যেমন, মহিয়াড়ি রোড ও আশুতোষ ঘোষ রোড। দু’টিই খুব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। আশুতোষ ঘোষ রোডের এক দিকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, অন্য দিকে সাঁতরাগাছি স্টেশন। অভিযোগ, এবড়ো-খেবড়ো এই রাস্তা শুধু পথচারীদের ক্ষেত্রেই নয়, যান চলাচলের পক্ষেও বিপজ্জনক। মহিয়াড়ি রোডও যান চলাচলের অযোগ্য। বৃষ্টির জল, আবর্জনায় অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
বাকসাড়া রোড, ললিতমোহন সরণি, বাকসাড়া স্টেশন রোড ও ভিলেজ রোডের অবস্থাও খারাপ। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ সাহার কথায়: “বাকসাড়া রোড এবং ললিতমোহন সরণি বাকসাড়ায় ঢোকার মূল রাস্তা। বড় বড় ইট বেরিয়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যেই সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা উল্টে যায়।”
কে সারাবে এই রাস্তা?
এ নিয়েই চলছে চাপানউতোর। কেএমডব্লিউএসএ বলছে, সারাবে পুরসভা। পুরসভা বলছে, টাকা নেই, কেএমডব্লিউএসএ টাকা দিলে কাজ হবে।
বাকসাড়া আশুতোষ ঘোষ রোড
কেএমডব্লিউএসএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কমলেশ বসাক বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা ঝামা আর বালি ফেলেছি। সম্পূর্ণ সারাইয়ের দায়িত্ব পুরসভার। প্রকল্পে তাই বলা হয়েছে।” যদিও হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “রাস্তা সারানোর জন্য বহু দিন আগে রাজ্য সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা চেয়ে পাঠিয়েছি। টাকা এখনও পাইনি। কেএমডব্লিউএসএ-কে ওই টাকা আদায়ের জন্য বলেছি।” তিনি জানান, মেন পাইপ বসানোর কাজ হয়েছে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশন লাইন এখনও পাতা হয়নি। ডিস্ট্রিবিউশন লাইন বসানোর পরে পিচ হবে।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “হাওড়া পুরসভা যখন সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট পাঠিয়েছিল তখনই তাদের চিন্তা করা উচিত ছিল। ওরা পাইপ বসানোর খরচ পাঠিয়েছে। কিন্তু রাস্তা সারানোর খরচ পাঠায়নি। রাজ্য সরকারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। রাস্তাগুলি পুরসভাকেই সারাতে হবে। যত দিন না তা হচ্ছে হওড়ার মানুষকে ভুগতে হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.