রাজ্য সরকারের যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ‘বিবেক মেলা’। জল সরবরাহ-সহ নানা পরিষেবা দিয়ে সেই অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করবে রামপুরহাট পুরসভা। সেই ‘বিবেক মেলা’র আমন্ত্রণপত্রে পুরপ্রধানের নাম না থাকায় বিতর্ক তৈরি হল রামপুরহাটে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি-সহ তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ। প্রতিবাদে তাঁরা মেলা বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন।
পুরপ্রধান অশ্বিনীবাবুর ক্ষোভ, “ওই মেলার জন্য সম্প্রতি রামপুরহাটে যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী মদন মিত্রের প্রতিনিধি শুভদীপ মণ্ডলের উপস্থিতিতে এবং পুরসভার অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। পুরসভার পক্ষ থেকেই যাবতীয় সহযোগিতা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। অথচ আমন্ত্রণপত্রে পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান বা পুরসভার অন্য কোনও আধিকারিকের নাম নেই। এই ঘটনায় অপমাণিত বোধ করছি।”
পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রাঙ্গণে ওই ‘বিবেক মেলা’র আয়োজন করা হয়েছে। যুব কল্যাণ দফতরের পক্ষ থেকে যার দায়িত্বে আছেন রামপুরহাটের পুর যুব আধিকারিক মিহিরকিরণ দাস। তিনিই ওই মেলার সম্পাদক ও আহ্বায়ক। মেলার আমন্ত্রণপত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে নাম রয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী ও চন্দ্রনাথ সিংহের। নাম রয়েছে স্থানীয় বিধায়ক, তৃণমূলের আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি। আমন্ত্রণপত্রের শুরুর দিকেই লেখা রয়েছে ‘পুর যুব অফিস ও রামপুরহাট পুরসভার সহযোগিতায় বিবেক মেলা’। তবুও তাতে পুরসভার কোনও প্রতিনিধির নাম না থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে কাউন্সিলরদের মধ্যে। |
উপপুরপ্রধান তৃণমূলের অনিন্দ্যকুমার সাহা বলেন, “এই আচরণে আমরা ভীষণ অখুশি। পুরসভায় সমস্ত স্তরে আলোচনা করে মেলার সাফল্যের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ ভাবে আমাদের কারও নাম না দেওয়াটা ঠিক কাজ হয়নি।” ঘটনার নিন্দা করেছেন বিজেপি কাউন্সিলর সুপর্ণা চোধুরী এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিও। সুপর্ণাদেবী বলেন, “এ কী চলছে! পুরসভার একটি অনুষ্ঠান। সেখানে পুরপ্রধানকে অসম্মান করা হবে কেন? প্রশাসনের সঙ্গে পুরসভার সমন্বয়ের অভাব বেরিয়ে পড়েছে।” সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-র অভিযোগ, “কাউন্সিলরদের অপমান করা হচ্ছে।” এ দিনের ঘটনার পেছনে অবশ্য তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দেখছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিক। তাঁর বক্তব্য, “পুরপ্রধান কার্যত শহরের এক নম্বর নাগরিক। তাঁকে বাদ দেওয়া মানে সমস্ত পুরবাসীকে অসম্মানিত করা।” অন্য দিকে বিধায়ক তথা ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও মন্তব্য করেছেন, “আমন্ত্রণপত্রে পুরপ্রধানের নাম না দেওয়াটা উচিত কাজ হয়নি।”
ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন যুব আধিকারিক মিহিরকিরণ দাস। তিনি বলেন, “অনিচ্ছাকৃত ভাবে এমন ভুল হয়েছে। পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, সাহায্য করবেন।” যদিও যোগাযোগ করা হলে পুরপ্রধান অশ্বিনীবাবু জানান, পুরসভা ওই অনুষ্ঠান বয়কট করবে। পুরপ্রধানের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু জানেন না বলেই দাবি করেছেন মিহিরবাবু।
আসন্ন বিবেক মেলাকে ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী মদনবাবুর প্রতিনিধি তথা যুব তৃণমূলের রামপুরহাট শহর সভাপতি শুভদীপ মণ্ডলের মন্তব্য, “সমস্ত বিতর্ক মিটিয়ে নিয়ে রাজ্য সরকারের এই অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবেই উদযাপন করা উচিত।” |