মাদের এই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আগের তুলনায় এখন অর্থনৈতিক উন্নতি বেশ ভালই হয়েছে। আর শুধু অর্থনৈতিকই নয়, সামাজিক অগ্রসরতাও ভালই ঘটেছে। সত্তরের দশক অবধি বেশির ভাগ বাঙালি মধ্যবিত্তের বাড়ি ছিল বাংলা সিনেমার পীঠস্থান। অর্থাৎ বাবা অসুস্থ, চিকিৎসার পয়সা নেই, ভাইয়ের চাকরি নেই, মা-বোন রাত্রিবেলায় জল খেয়ে ঢেকুর তুলে শুয়ে পড়ছেন। এখন বাঙালির জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কষ্টের দিনযাপন প্রায় শেষ, সমস্যা অনেক কমেছে। কিন্তু একটা সমস্যা শুধু বাঙালি নয়, প্রতিটি ভারতীয়ের ঘরে ঘরে ঢুকেছে। সেটি হল চুলের স্থায়িত্বের মেয়াদ প্রতি দিন কমে যাচ্ছে। এই সমস্যাটি ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কিছু না কিছু রয়েছে।
চুলের তিনটি অবস্থা আছে। সুস্থ, সাময়িক অসুস্থ এবং মৃত। অর্থাৎ কিছু সমস্যা থাকে যা চিকিৎসার সাহায্যে ঠিক মতো সমাধান করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসাই কার্যকর হয় না। মৃত চুলকে আয়ু দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। একটি শিশু ঠিক যে ক’টি চুল নিয়ে জন্মাচ্ছে, সারা জীবন তার চুলের সংখ্যা ওই একই থাকবে। অর্থাৎ এক ঘন সেন্টিমিটারে চুলের সংখ্যা যত, সেটা নির্দিষ্ট। চেষ্টা করেও আপনি তা বাড়াতে পারবেন না। অনেক সময় ছোটদের জন্মের পর মাথায় চুল থাকে না। কিন্তু চুলের গোড়ার দিকে একটি আস্তরণ থাকে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি থেকে চুল বেরিয়ে আসে।
চুলের চিকিৎসা সম্পর্কে বলা দরকার, কিছু দিন আগে পর্যন্ত এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। ক্লায়েন্ট বলতেন, আমার চুল বেরোচ্ছে না, থেরাপিস্ট বলতেন সামনের দিকে আপনার চুল বেরিয়েছে। এ সব নিয়ে তর্কবিতর্ক লেগেই থাকত।
এই তর্কের শেষ ধাপ হিসেবে একটি যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যাকে বলা হয় ‘হেয়ার ডিটেকশন যন্ত্র’। এটি একটি ক্যামেরার মতো, যা আপনার সমস্ত মাথায় স্ক্যান করবে। এর থেকে আপনি জানতে পারবেন আপনার চুলের বর্তমান স্বাস্থ্য কেমন। এই পরীক্ষার ফলাফল দেখে বোঝা যাবে আপনার চুলের জন্য কী ধরনের চিকিৎসা দরকার। এবং সে সম্বন্ধে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কোন চিকিৎসা করাবেন, খরচ কী হবে সব এই যন্ত্রের সাহায্যে জানা সম্ভব।
এই যন্ত্রের সাহায্যে আপনি আরও জানতে পারবেন, আপনার মাথায় কত চুল রয়েছে। এর মধ্যে ক’টি সুস্থ, ক’টি অসুস্থ। অসুস্থ চুলের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আপনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকবেন। এটি সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি যন্ত্র।
কেমিক্যালি ট্রিটেড হেয়ার স্ট্রেটনিং, পার্মিং, জেটিং, কালারিং, ব্লন্ডিং, পিগমেন্ট ওয়াশ চুলের এই ধরনের বেশ কতগুলি ফ্যাশন আছে। এগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। এগুলি করার ফলে চুলের নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু তার জন্য তো আর ফ্যাশন বন্ধ করে দেওয়া যায় না। ফ্যাশন করুন, কিন্তু তার পরে যদি চুলকে ঠিক মতো যত্ন করতে পারেন, তবে ক্ষতি কম হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছ থেকে উন্নত মানের প্রডাক্ট ব্যবহার করে চুলের যত্ন করতে হবে। তাই বলে নামী কোম্পানির প্রডাক্ট বেশি দাম দিয়ে কিনবেন না। ক্লাব সালোঁ থেকেই কিনবেন এবং চুলের কোনও ফ্যাশন করতে হলে এই সব ক্লাব সালোঁ’তেই করাবেন। তার পর চুলে নিয়মিত ‘স্পা’ করাতে হবে। ‘স্পা’ শব্দের অর্থ ‘ধারাবাহিক যত্ন’। যে কোনও স্টাইলের পর ঠিক মতো শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সিরাম, প্যাক, স্টিম এগুলি ঠিক পদ্ধতিতে এবং নিয়মিত করাতে হবে। তবেই আপনার চুল ফ্যাশনের ধকল সহ্য করতে পারবে। কোন শ্যাম্পু, কতটা পরিমাণ, কত দিন অন্তর ব্যবহার করবেন, তা বলবেন আপনার থেরাপিস্ট।

যাঁরা ‘ন্যাচারাল লুক’ ভালবাসেন


যাঁরা চুলে কোনও ফ্যাশন করেন না, তাঁদেরও একটি নিজস্ব ‘হেয়ার কেয়ার কিট’ ব্যবহার করা উচিত। প্রথমে আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী এক জন থেরাপিস্ট আপনার জন্য কোন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও সিরামটি ঠিক, তা বলে দেবেন। সেগুলি নিয়মিত ও যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে হবে। বন্ধুর কোনও শ্যাম্পু ভাল কাজ করেছে দেখে সেটি কিনে ফেলবেন না। একই ধরনের খাবার খেতে যেমন বেশি দিন ভাল লাগে না, তেমনই চুলের ক্ষেত্রেও শ্যাম্পু মাঝে মাঝে পরিবর্তন করা উচিত, তবে অবশ্যই থেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী। কন্ডিশনার ও সিরাম লাগাবেন শুধু চুলে, স্ক্যাল্পে নয়। লাগানোর সময় নীচ থেকে ওপরের দিকে উঠতে হবে। ছয় সপ্তাহ অন্তর চুল ট্রিম করতে হবে। যে কোনও চুলের জন্য মাসে এক বার একটি ক্লিনিকাল ট্রিটমেন্ট অবশ্যই প্রয়োজন।

চিকিৎসা


থাইম বাটার ট্রিটমেন্ট, সি এন বাটার ট্রিটমেন্ট, রোজমারি এবং বায়োকেমিক ওয়াশ, ব্যাকটেরিয়াল রেজিম এ সব আধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে খুশকি, মাথার র্যাশ, চুল ওঠা, অতিরিক্ত রুক্ষ চুল, মাথায় দুর্গন্ধ ইত্যাদির চিকিৎসা হয়। এগুলি জাপানি পদ্ধতি। এতে ব্যবহার করা হয় স্ক্যাল্প স্টিমুলেটিং যন্ত্র। এই যন্ত্র ওষুধকে ক্ষত স্থানে যথাযথ ভাবে পৌঁছে দেয়। যার ফলে চুল তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

কয়েকটি টিপস
ভিজে চুল বাঁধবেন না, আঁচড়াবেন না।
গোল মুখ দাঁড়ার চিরুনি ব্যবহার করুন (চিরুনির দু’টি দাঁতের মধ্যে যেন যথেষ্ট ফাঁক থাকে।
প্রথমে চুলকে তোয়ালে দিয়ে শুকোবেন। তার পর অন্য কিছু ব্যবহার করবেন। অতিরিক্ত ভিজে চুল ঘষবেন না।
অন্যের চিরুনি ব্যবহার করবেন না।
সিঁদুর ব্যবহার করলে তা যেন নামী কোম্পানির আয়ুর্বেদিক সিঁদুর হয়।
চুলের পরিচর্যার জন্য কোনও কম দামি জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হবেন না।

সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.