সাজছে তৃণমূল
জনসংযোগে তিন মাসে ৫০ গ্রামে যাবেন মন্ত্রী
নাগালে মন্ত্রীকে দেখে দু’চার কথার পরে সিলভিনা মিন্জকে বলতে শোনা গেল, “যত কথা হচ্ছে, ততটা কাজ হচ্ছে না কেন?” স্থানীয় প্রবীণ নবকুমার বর্মনের প্রশ্ন, “নতুন সরকারের দেড় বছর হতে চললেও বিপিএল তালিকা সংশোধন, সংযোজনের কাজে ঢিলেমি কেন?” স্কুল গেটের অদূরে ক্লাস ছেড়ে বার হয়ে কৌতুহলী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসা, “বহুবার বলেও খড়িবাড়িতে একটি কলেজও হয়নি। সেই শিলিগুড়িই ভরসা। আপনারা এক বছরে একটা কলেজের কাজ করতে পারলেন না কেন? মসজিদের সামনে দাঁড়ানো মন্ত্রীকে দেখে এলাকার মৌলবী আক্ষেপ করে বলেছেন, “একটা হাই মাদ্রাসা আজও হল না?” বস্তুত, দুদিন ধরে গাঁয়ের সরু রাস্তা, চা বাগানের কলোনিতে গিয়ে এমনই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। কখনও মন্ত্রী ছোট মাপের সমস্যার সমাধান না-হওয়ায় এসডিও-বিডিও কে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিলেন। আবার কখনও খোলাখুলি কবুল করে নিলেন, অনেক কাজ শুরুই করা যায়নি। আবার পড়ুয়াদের কথাও দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যে করেই হোক একটা কলেজ চালুর ব্যবস্থা করবেন। গৌতমবাবু যে পদযাত্রার নাম দিয়েছেন, ‘মানুষের কাছে চলো’। ১১ সেপ্টেম্বর সেই ‘চলা’ শুরু হয় নেপাল সীমান্তের খড়িবাড়ি-নকশালবাড়ি থেকে।
পরের ধাপে ভুটান সীমান্তের সঙ্কোশ-কুমারগ্রাম। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে বালুরঘাটের তপন, মালদহের গাজল, উত্তর দিনাজপুর হয়ে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে শেষ হবে পদযাত্রা। সব মিলিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২৫ দফায় দুদিন করে উত্তরবঙ্গের ৫০টি গ্রামে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মন্ত্রী। প্রতিটি সফরে এক রাত করে গ্রামের কোনও বাসিন্দার বাড়িতে থাকবেন মন্ত্রী। নকশালবাড়িতে মন্ত্রী রাত কাটিয়েছেন আদিবাসী চা শ্রমিক পিয়ারা বেং-এর ছোট্ট বাড়িতে। পিয়ারা ও তাঁর স্ত্রী ক্লিস্টিকা নিজে চেঙ্গা নদী থেকে চুনো মাছ ধরে তা ভেজে খাইয়েছেন মন্ত্রীকে। বছর গড়ালেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সে কথা মাথায় রেখেই দল যে সব এলাকায় অতি মাত্রায় দুর্বল, সে সব জায়গাই পদযাত্রার তালিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের অনেকেরই ধারণা, ওই এলাকার মানুষের ছোট মাপের সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য যেমন প্রশাসনকে আরও সক্রিয় করা যাবে, তেমনই দলের লোকবলের ঘাটতি পূরণের রাস্তা মসৃণ হবে। পাশাপাশি, রাজ্যে সরকার গঠনের পরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ কোন কোন বিষয়ে নতুন সরকারের সমালোচনা করছেন, কী ধরনের ত্রুটি মানুষের নজরে পড়ছে, তাও খোলাখুলি বোঝার চেষ্টা করছেন মন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, ওই পদযাত্রার খুঁটিনাটি এবং কিছু ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ সংবলিত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন মন্ত্রী। গৌতমবাবুর কথায়, “অফিসে-বাড়িতে রোজই কত মানুষ আমাদের কাছে আসেন। এখন আমরাই যাচ্ছি। কত অভিজ্ঞতা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক প্রকল্পের কাজে কী ধরনের গাফিলতি হচ্ছে তা টের পাচ্ছি। কত ছোট ছোট বিষয়ে মানুষের ক্ষোভ-দুঃখ রয়েছে ভাবা যায় না। রাতারাতি সব হবে না। তবুও পাশে আছি এটা বোঝাতে চাইছি।” শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট হওয়ার কথা ২০১৪ সালে। ঘটনাচক্রে, নকশালবাড়ির বিধায়ক হলেন দার্জিলিং কংগ্রেস (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তা হলে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি থেকে পদযাত্রা শুরু কেন? গৌতমবাবুর যুক্তি, “শিলিগুড়িতে পঞ্চায়েত ভোটের ঢের দেরি। তাতে কী! ভোট না-থাকলে নেতারা গ্রামে পথ মাড়ান না, এই ধারণা ভেঙে দিতে চাইছি। তা ছাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ির আধিবাসী, সংখ্যালঘুদের অনেক সমস্যা রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই ওখান থেকে শুরু করেছি।” শঙ্করবাবু অবশ্য মন্ত্রীকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন। তাঁর টিপ্পনি, “তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী গৌতমবাবু আমার নির্বাচনী ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমি গর্বিত। তবে আমার ধারণা ছিল, প্রশাসক ও নেতা হিসেবে ওই এলাকা ওঁর আগেই ঘোরা রয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.