|
|
|
|
দিন-রাত দফতরে থাকুন নেতারা, চায় সিপিএম |
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
শিয়রে তৃণমূল! ঘুম উধাও সিপিএমের! আক্ষরিক অর্থেই! ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর ধাক্কায় কাবু সিপিএম তার নেতা-কর্মীদের ‘দাম্ভিকতা’ ছেড়ে মানুষের দুয়ারে ফিরে যাওয়ার কথা বেশ কিছু দিন ধরেই বলছে। ক্ষমতায় থাকার সময়ের অভ্যাস পিছনে ফেলতে বলা হচ্ছে। জনসংযোগ ঝালিয়ে নেওয়ার দাওয়াই হিসাবেই সিপিএম নেতাদের এ বার বাড়ির ‘সুখশয্যা’ ভুলে রাত-দিন দলীয় কার্যালয় আগলাতেও বলা হচ্ছে। যাতে যে কোনও সময়ে এসে সাধারণ মানুষ বা কর্মীরা নেতাকে হাতের কাছে পেতে পারেন।
সরকারে আসার আগে সিপিএম যে সব পন্থায় জনসংযোগ বাড়াত, তার অনেক কিছুই নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে বিস্মৃত। ক্ষমতায় আসার পরে পরে প্রথম কিছু দিন চালু থাকলেও সেই সব অভ্যাস ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছে। গত তিন বছরে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে দলের ময়না-তদন্তে বারবার জনতার সঙ্গে দূরত্বের কারণটিই বড় হয়ে উঠে এসেছে। নেতা-কর্মীদের একাংশের ‘প্রভুত্ব’ করার মানসিকতা দলকে ডুবিয়েছে বলে নিয়মিতই সভা-সমাবেশে ব্যাখ্যা করছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এক দিন ছেড়ে-আসা ‘জনতার পথে’ ফিরতে দলের কর্মীদের ফের কৌটো বা লালঝান্ডা হাতে টাকা তুলতে বলেছেন বিমান বসুরা।
দলীয় কার্যালয়ে চব্বিশ ঘণ্টা নেতার উপস্থিতি সে দিকেই আরও এক ধাপ এগোনো বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ।
সিপিএম সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে জেলা দফতর থেকেই নেতাদের সর্বক্ষণ হাজির থাকার কাজ শুরু হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্ব সমস্ত জেলা সম্পাদককে নির্দেশ দিয়েছেন, আগের মতো দিন-রাত জেলা কার্যালয় শুধু খোলা রাখলেই হবে না। সব সময়ে কোনও না কোনও জেলার নেতাকে উপস্থিত থাকতে হবে। দলের একাধিক জেলা সম্পাদকের বক্তব্য, জেলা কার্যালয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কর্মী-সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁদের যেন অপেক্ষা করতে না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নেতারা হাজির থাকলে দলের কর্মীদেরও ‘আত্মবিশ্বাস’ বাড়ে। দলের মধ্যে বোঝাপড়াও ভাল হয়।
দলের এক রাজ্য নেতার ব্যাখ্যা, “ধরা যাক, গ্রাম থেকে সকাল ৬টায় কেউ সমস্যা নিয়ে জেলা কার্যালয়ে এলেন। কিন্তু বেলা ১০টার আগে হয়তো নেতাদের সঙ্গে তাঁর দেখাই হল না। তাতে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গভীর রাতে হয়তো প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অশান্তির খবর এল। সেই সময়ে জেলা দফতরে কোনও নেতা থাকলে তাঁর পক্ষে চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খবর দেওয়া সহজ। বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত যাওয়াও সম্ভব।” রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মতে, “কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন কখনও বাড়ি থেকে হয় না। পার্টি অফিস থেকে হয়। এখন যতই মোবাইল ফোন আসুক, নেতা-ক্যাডারদের মানুষের মধ্যে থাকার সুফল সব সময়েই রয়েছে।” দলের এক জেলা সম্পাদকের কথায়, “এই সব অভ্যাস অতীতে ছিল। দীর্ঘ দিন সরকারে থাকলে যা হয়, মনে হচ্ছিল, সব এমনিই হয়ে যাবে!”
আলিমুদ্দিনের এক প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দেন, “কাকাবাবু (মুজফ্ফর আহমেদ) থেকে প্রমোদ দাশগুপ্ত, আবদুল্লা রসুল থেকে বিনয় চৌধুরী, অনিল বিশ্বাস এঁদের সকলের কাছেই দলের দফতর প্রায় ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। সমর মুখোপাধ্যায় ক’দিন পরে শতবর্ষে পা দেবেন। এখনও থাকেন পার্টি কমিউনেই। বিমানদা’ও তো রাজ্য দফতরেই থাকেন। জেলা কার্যালয়গুলিতেও আগে কোনও না কোনও নেতা দিন-রাত থাকতেন।” রাজ্য কমিটির আর এক নেতার সংযোজন, “আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা দফতরে গেলে সুধীর গিরিকে পাওয়া যেত। অনেক সময়ে নিজে রান্না করেও খাইয়েছেন। দল ভাগ হওয়ার পরে সুকুমার সেনগুপ্ত একটা সময়ে পার্টি অফিস থেকেই মেদিনীপুরে সিপিএমের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মুর্শিদাবাদের দফতরে পাওয়া যেত মধু বাগ বা হরনাথ চন্দদের। সব জেলা কার্যালয়েই কোনও না কোনও নেতা থাকতেন। এই অভ্যাস যখন তৈরি হয়েছিল, তখন দল ছিল বিরোধী আসনে। এখন সেই রেওয়াজ ফের গড়ে তুলতে হচ্ছে।”
ভুলে-যাওয়া পথে সিদ্ধিলাভ হয় কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে! |
|
|
|
|
|