|
|
|
|
লাল ফিতের নাভিশ্বাসে রাজভবন, তাও মন গলছে না মুখ্যমন্ত্রীর |
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
রাজভবন পরিচালনায় স্বাধীনতা চান রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তাতে সায় নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
রাজ্যপাল মনে করেন, রাজভবনের প্রশাসন চালাতে গিয়ে সব ব্যাপারে মহাকরণের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকাটা অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মত হল, তাঁর অধীনস্থ স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দফতরের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হোক রাজ্যপালের রোজনামচা।
রাজ্যপাল তাঁর প্রস্তাব লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। প্রায় দু’মাস আগে সেই চিঠি পেলেও এখনও তার জবাব দেননি মুখ্যমন্ত্রী। শুধু স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন: রাজভবনের কাজ আর অযথা ফেলে রাখা যাবে না।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজভবনের প্রশাসন পরিচালনায় ‘স্বাধীনতা’ চেয়ে গত ২০ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। চার পাতার ওই চিঠিতে তিনি রাজভবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতেও কী ভাবে মহাকরণের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে, তা সবিস্তার জানান। অতি তুচ্ছ কাজও কী ভাবে লাল ফিতের ফাঁসে দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে, তা-ও উল্লেখ করেন তিনি। রাজ্যপালের বক্তব্য, প্রতি পদক্ষেপে ‘ছাড়পত্র’ আদায় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে রাজভবনের। তাই অহেতুক নিয়ন্ত্রণের পাট চুকিয়ে প্রশাসনিক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁকেই দেওয়া হোক। |
|
রাজ্যপাল লিখেছেন, রাজভবনে তাঁর অধীনে দু’টি সচিবালয় রয়েছে। একটি প্রশাসনিক কাজকর্ম, অন্যটি রাজভবন দেখভালের (হাউসহোল্ড) জন্য। দু’টি সচিবালয় থেকেই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার ছাড়পত্র পেতে প্রথমে ফাইল পাঠাতে হয় স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) দফতরে। সেখান থেকে তা যায় অর্থ দফতরে। অর্থ দফতর থেকে আবার তা ফেরত আসে স্বরাষ্ট্র দফতরে। এর পর ফাইলটি পেশ করা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সেখানে অনুমোদন মিললে তবেই তা ফেরত আসে রাজভবনে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে অনেক সময়ই দেখা যায়, যে উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পরে তার আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।
নারায়ণন চাইছেন, স্বরাষ্ট্র দফতরের মারফত বাধ্যতামূলক এই ফাইল চালাচালি বন্ধ হোক। রাজভবন কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা সরাসরি সংশ্লিষ্ট দফতরকে স্রেফ জানিয়ে দেবে। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু রাজভবনের ফাইল নানান দফতরে ঘোরানোর প্রথার অবসান হওয়া দরকার।
এর পাশাপাশি আরও দু’টি প্রসঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনে বিহিত চেয়েছেন রাজ্যপাল। প্রথমত, রাজভবনের দেখভালের জন্য ৩৮১টি অনুমোদিত পদ থাকলেও ১৯১টি পদে দীর্ঘদিন ধরে কোনও লোক নেই। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এই সব শূন্য পদে নিয়োগের ভার রাজভবনের সচিবালয়ের হাতেই ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
দ্বিতীয়ত, ৬৯ জন কর্মী অনেক দিন ধরে রাজভবনের বাগান, রন্ধনশালা ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। তাঁরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। এঁদের স্থায়ী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্যপাল। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা চাওয়ার পাশাপাশি রাজভবনে স্বাধীন ভাবে কর্মী নিয়োগও করতে চেয়েছেন তিনি। মমতাকে রাজ্যপাল লিখেছেন, “বার বার বলার পরও আগের জমানায় এ সব কিছুই হয়নি। আপনার কাছে আমার অনুরোধ, জটিলতা কাটাতে আপনি সক্রিয় হবেন। রাজভবনের কাজ লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকবে না।”
রাজ্যপাল তো ‘স্বাধীনতা’ চেয়েছেন, কিন্তু সরকার কী করবে? |
|
|
বারবার বলার পরও আগের জমানায় এ সব কিছুই হয়নি।
আপনার কাছে অনুরোধ, জটিলতা কাটাতে সক্রিয় হবেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল |
|
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্যপাল যা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী তা দিতে নারাজ। এ ভাবে নিয়োগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাজ্যপালকে দেওয়ার আইনি সংস্থান আছে কিনা, স্বরাষ্ট্র দফতরকে সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “সংবিধানে রাজ্যপালের ভূমিকা স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে। এ ছাড়া রাজভবন পরিচালনার বিষয়টিও ‘রুলস অফ বিজনেস’-এ লেখা আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র বিভাগেরই রাজভবনের খুঁটিনাটি দেখার কথা। ফলে রাজ্যপালকে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হবে কী করে?” ওই কর্তা আরও জানান, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন-সহ নানা ধরনের কমিশন এমনকী মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসও স্বরাষ্ট্র দফতর নিয়ন্ত্রণ করে। রাজভবনকে এই স্বাধীনতা দেওয়া হলে তারাও একই ক্ষমতা চাইবে। ফলে রাজ্যপাল যা লিখেছেন, তা মানা অসম্ভব। তবে রাজভবনের কোনও ফাইল যাতে আটকে না থাকে তার জন্য অফিসারদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।
যদিও রাজভবনের কর্তাদের মতে, সেই নির্দেশ আদৌ কার্যকর হচ্ছে না। রাজভবন সূত্রের খবর, নানা বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েও সময়ে কেন তা পাওয়া যাচ্ছে না, তার কারণ জানতে চেয়ে সরকারকে আলাদা ভাবে চিঠি পর্যন্ত দিতে হয়েছে। তাতেও কাজের কাজ হয়নি।
সরকার কি রাজ্যপালকে চিঠি লিখে তার মনোভাব জানিয়ে দেবে? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “ব্যতিক্রমী ভাবে রাজ্যপাল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। তাই জবাব দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীরই।” |
|
|
|
|
|