তিনি নাচতে চান!
তিনি গাইতে চান!
তিনি চান নিটোল এন্টারটেইনার হয়ে উঠে মনোরঞ্জনের দুনিয়ায় নিজস্ব ছাপ রেখে যেতে!
তিনি, মানে মাইক টাইসন হংকংয়ে রীতিমতো সাংবাদিকদের ডেকে ঘটা করে আবরণ উন্মোচন করেছেন নিজের মনের এই একান্ত গোপন বাসনার। টাইসনের কথায়, “আমি মিউজিক্যাল-এ নামতে চাই। নাচতে আর গাইতে চাই। আই ওয়ান্ট টু হ্যাং আউট অ্যান্ড এন্টারটেইন।”
না, বুঝতে কোনও ভুল হচ্ছে না। মাইক টাইসন মানে সেই এক সময়ের বক্সিং রিং-এর বাদশা, নক আউট বিশেষজ্ঞ মাইক টাইসনই। যাঁর বর্ণময় জীবনচরিতে এ পর্যন্ত পেশাদার বক্সিংয়ের শীর্ষ-শৃঙ্গ জয়ের ঝলমলে আলো থেকে শুরু করে ধর্ষণের দায়ে তিন বছরের হাজতবাসের কলঙ্ক-কালি-- সবই আছে। গত ক’বছরে অবশ্য বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা করে চলেছেন এক সময়ে হেভিওয়েট বক্সিংয়ের অবিসংবাদী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কথায় কথায় মেজাজ হারানো, মারপিটে জড়ানো, উদ্ধত ভাবমূর্তিটাকে যত্ন নিয়ে বদলে ফেলার চেষ্টায় জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন অন্য পথে। আর সেই পথে চলতে গিয়ে ‘তাঁকে ধরিয়াছে ও রোগে’, যে রোগের নাম থিয়েটার!
টাইসনের অভিনয় প্রতিভাকে অবশ্য হেলাফেলা করা যাচ্ছে না। ব্রডওয়ে-তে একক অভিনয়ে নাটক করে ইতিমধ্যেই মার্কিন মুলুকে সাড়া ফেলেছেন তিনি। টাইসনের জীবন কাহিনির ভিত্তিতে ‘আনডিসপিউটেড ট্রুথ’ নামে ওই নাটক পরিচালনা করেন স্পাইক লি। জুন মাসে লাস ভেগাসে প্রিমিয়ার হওয়ার পরে নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে-তে নাটকের ছ’টি শো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে এমন ‘নক-আউট পাঞ্চ’ বসিয়ে দেন যে, জনতার দাবিতে শো-এর সংখ্যা আধ থেকে বাড়িয়ে এক ডজন করতে হয়। অভিনেতা টাইসনকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ফেলেছিলেন সমালোচকেরা। কিন্তু তাঁরাও লিখতে বাধ্য হন, “এই লোকটা জীবনে ক্লান্তিকর বা ম্যাড়ম্যাড়ে কিছু করায় পুরোপুরি অক্ষম।”
এ বার ব্রডওয়ে মিউজিক্যালে নামতে চাইছেন ছেচল্লিশের টাইসন। আর এ কাজে তাঁর প্রেরণা রুপোলি পর্দার চরিত্র ‘বিলি এলিয়ট’-- বক্সার থেকে ব্যালে শিল্পী হয়ে ওঠা নিয়ে তৈরি একটি ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের নায়ক। টাইসন অবশ্য সাংবাদিকদের বিলি এলিয়টের কথা বলতে গিয়ে বলে বসেন, “আমি বিলি ম্যাডিসনের মতো হতে চাই।” ইনিও সিনেমারই আর এক চরিত্র। পরে পরিষ্কার হয়ে যায়, বক্সার বিলি এলিয়টই বোঝাতে চেয়েছিলেন।
এই চুকটুকু অবশ্য সবাই মাফ করে দিচ্ছে। বরং লোকে কিঞ্চিৎ আতঙ্কিত টাইসনের গাইবার ঝোঁক দেখে! টাইসনের নাচ লোকে আগে দেখেছেন। রিং-এর মধ্যে তাঁর ফুটওয়ার্ক বরাবরই ভাল ছিল। আর গত বছর তো আর্জেন্তিনার একটি টিভি শো-এ স্ত্রী লাকিয়া স্পাইসারের সঙ্গে সালসা নেচে বেশ তারিফও কুড়িয়েছেন। তাই টাইসন ‘আমি নাচতে চাই’ বলায় চমক নেই। কিন্তু তাঁর গানটাই ভাবাচ্ছে। এর আগে তিনি টিভি শো-এ ফিল কলিনসের গান ‘দ্য এয়ার টুনাইট’ গেয়েছেন। তার পরে গত জুনে অন্য একটি শো-এ বাস্কেটবল তারকা লেব্রন জেমসের জন্য একটি ‘মিউজিক্যাল ট্রিবিউট’-ও পেশ করেন। এবং দুই ক্ষেত্রেই দর্শককুলের অভিজ্ঞতায় ‘গানের গুঁতো’ শব্দটা প্রাধান্য পেয়েছে।
এ দিন অবশ্য টাইসনকে ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল-এ নেচেগেয়ে দর্শকদের মন ভরাতে বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখিয়েছে। এবং তিনি জীবনে কিছুই ম্যাড়ম্যাড়ে করতে পারেন না বলে বিশেষজ্ঞদের রায় যদি ঠিক হয়, তবে সম্ভবত টাইসনে ব্রডওয়ে অ্যাডভেঞ্চারও দর্শককুলকে নক আউট করে দিতে বাধ্য। “আমি এই দায়িত্বশীল প্রাপ্তবয়স্ক মানুষটা হয়ে উঠতে দারুণ উচ্ছ্বসিত। আমি যে আজ ঠিক কতটা খুশি, সেটা বলে বোঝাতে পারব না,” এ দিন বলেছেন টাইসন।
বর্ণময় জীবনের রামধনুতে আপাতত আরও একটা নতুন রং যোগ করায় মেতেছেন চ্যাম্পিয়ন। |