খেলাধুলোর মাঝেমাঝে শিক্ষা দেওয়ার কিছু অদ্ভুত রীতি থাকে। দু’দিন আগে চেন্নাইয়ের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যেমন একটা উদাহরণ। সাত ওভার আগে পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা ফেভারিট ভারতই জিতবে। সহজেই জিতবে। তখনও পর্যন্ত আমরা ভাবছিলাম যে, আমরা জানি ম্যাচটা কে জিততে চলেছে। আর জেতার পর ঠিক কী হবে। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে প্লেয়াররা হোটেলে ফিরবে। বিশ্লেষণ চলবে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে। আর এখন লোকে যা বলে থাকে, সে ভাবেই ক্রিকেটাররা সবাইকে বলবে যে, ‘ম্যাচ থেকে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আমরা এগোতে চাইছি।’ কিন্তু এই ‘এগোতে চাইছি’ ব্যাপারটা কী? সাধারণ লোকের কাছে এটা রোজ ঘুম থেকে ওঠার মতো একটা ব্যাপার। কিন্তু খেলাধুলোর জগতে ব্যাপারটা সব কিছুকেই বোঝায়। ওই শেষ সাত ওভারে যা যা ঘটল, সে সব কিন্তু দু’টো টিমেরই খতিয়ে দেখা উচিত। নিউজিল্যান্ড আর ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই দু’টো টিমের জন্যই কিন্তু চেন্নাই একটা বার্তা ছেড়ে রাখল। |
কিউয়িদের এই জয় কিছুটা আত্মবিশ্বাস দেবে। নিজেদের উপর ভরসাও এ বার করতে পারবে ওরা। কিন্তু ম্যাচটা আচমকা একটা ধাক্কা দিয়ে গেল ভারতকে। যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ওদের জিততে হয়, তা হলে নিজেদের ক্ষমতার উপর অতিরিক্ত বিশ্বাসটা ওদের ছাড়তে হবে। ম্যাচে ভাল জায়গায় থাকলেও কখনও আত্মতুষ্ট হয়ে পড়া চলবে না। মনে রাখতে হবে, খেলার রং যে কোনও সময় বদলে যেতে পারে। আত্মবিশ্বাস ভাল, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নয়।
ভারত যদি বিচক্ষণ হয়, তা হলে ওরা বুঝবে যে চেন্নাই ম্যাচ কোনও বিপর্যয় নয়। বরং ওখান থেকে অনেক কিছু খতিয়ে দেখার আছে। শেখার আছে। ওদের দেখে একটা সময় মনে হচ্ছিল, ভারতীয়রা যেন নিজেরাই নিজেদের অতিক্রম করে যেতে চাইছে। যেন ম্যাচটা ওদেরই হাতে, জেতাও হয়ে গিয়েছে। ম্যাচ শেষের যখন ছ’ওভার বাকি, ভারতের দরকার ছিল ৪৪ রান। হাতে সাত উইকেট। যুবি ২১, ধোনি ৩ রানে ক্রিজে। এর পরে যা ঘটে গেল, তার পিছনে বেশ কিছু কারণকে তুলে আনা যেতে পারে।
ভাল বোলিং। খারাপ ব্যাটিং। স্লো উইকেট। আত্মতুষ্টি। অনেক কিছুকে তুলে আনা যায় পরপর। আমার মতে, টি টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে কোনও পর্বে একজন ক্রিকেটারের জানা উচিত, প্রত্যেকটা বলের সময় তার ভূমিকাটা কী হবে। ধোনি-যুবি পার্টনারশিপের প্রথম পাঁচ ওভার দেখার পর আমার মনে হচ্ছিল, দু’জনেই যেন খুচরো রান তোলার দিকে মন দিয়েছে। অথচ পরিস্থিতির বিচারে একজনকে তখন খুচরো রান তুলতে হত। অন্য জনকে যে কোনও উপায়ে খুঁজে বের করতে হত বাউন্ডারি রাস্তা। কিন্তু ওদের দেখে মনে হচ্ছিল, দু’জনের কেউই বুঝতে পারছে না কে কোন কাজটা করছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হাতে থাকে মাত্র ১২০-টা বল। তিনটে বলই যেখানে ছাড়া যায় না, সেখানে ব্যাট আর বল নিয়ে কে কী করবে বুঝতেই যদি কুড়িটা বল লেগে যায়, তা হলে তো হয়ে গেল। বোলিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অবশ্য অপেক্ষাকৃত সহজ, কারণ টি টোয়েন্টিতে কেউ যদি ঠিক করে ডট বল করবে, তা হলে তার সিদ্ধান্তকে ভুল বলা চলে না। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় শুধু সিঙ্গলসে অনেক সময় কাজ দেয় না। |