দু’টি চারা এবং আস্ত এক কিশোর-বেলা।
একটা জাম আর পেয়ারা চারা। প্লাস্টিকে মোড়া ঈষৎ নেতিয়ে পড়া দু’টি চারা আজ থেকে এক্কেবারে তাদের জিম্মায়। শুধু শুক্রবারের দুপুরটাই নয়, তাদের শৈশব থেকে কৈশোর পেরনো পাঁচটা বছর চারাগুলোর যত্নআত্তির ভার তাদেরই। তাদের হাত ধরেই, বাল্যকাল উজিয়ে ওই পেয়ারা আর জাম এক সময়ে কিশোর হয়ে উঠবে। এমনই মনে করছে মুর্শিদাবাদের ইন্দ্রানী হাসনা মায়ানি বিদ্যালয়। আজ, শুক্রবার সকালে স্কুলের প্রায় বারশো ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে দু’টি চারা।
বাড়ির চৌহদ্দি কিংবা বাগানের কোণ, যেখানেই হোক, পাঁচটা বছর চারাদের বড় করে তোলা তাদেরই দায়। দ্বারকা নদীর কোল ঘেঁষে রহিগ্রাম, জুড়ানকান্দি, ইন্দ্রাণী, আলিনগর, রসুলপুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামগুলি জামে পেয়ারায় সবুজ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছে ওই পড়ুয়াদের দিকে। |
স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমন একটি অসহনীয় প্রাকৃতিক পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য প্রকৃতিকেই হাতিয়ার করতে চাইছিলেন আমাদের দুই সহকর্মী, সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম ও সুনীলকুমার খান। সুনীলবাবু প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর। প্রকল্পের নাম ‘সবুজালয় ২০১২’। ওই প্রকল্পে বিদ্যালয়ের সব পড়ুয়াকে যুক্ত করা হয়েছে।”
স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক মতিয়ার রহমান মনে করেন, ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়ন প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১০টি গ্রামকে সবুজে মুড়ে দেওয়ার ওই প্রকল্পে দুটি ফলের গাছ নির্বাচন যথার্থ হয়েছে। কারণ, ওই দু’টি ফলই শরীরের পক্ষে উপকারি ও শিশুদেরও টান আছে জাম ও পেয়ারার প্রতি। ফলে স্বাভাবিক নিয়েমেই ছাত্রছাত্রীরা ওই দু’টি গাছের পরিচর্যায় আগ্রহী হবে।
শিক্ষক সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের ওই দু’টি গাছের পরিচর্যার ভার দেওয়া হবে।” দ্বায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কিনা তদারকি করতে পড়ুয়দের নিয়ে গড়া হবে পাড়া কমিটি। পাড়া কমিটির মাথায় থাকবে গ্রাম কমিটি। ওই কমিটির মাধ্যমে গাছগুলির অবস্থা সম্পর্কিত মাসিক রিপোর্ট বিদ্যালয়ে জমা পড়বে। তার ভিত্তিতে সব চেয়ে যত্নপ্রাপ্ত ও সবল গাছের পরিচর্যাকারী ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ওই প্রকল্পের ভবিষ্যত কেবল পুরস্কারেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। সবুজালয় প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটার সুনীলকুমার খান বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের একই সঙ্গে উষ্ণায়ন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে ওই প্রকল্প।” পেয়ারা-জামের ছায়ার জন্য অপেক্ষায় এখন দ্বারকা তীরের গ্রামগুলি। |