নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া উলুবেড়িয়ার ‘করোনেশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ খুলবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। বৃহস্পতিবার কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ খবর বলা হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ, কারখানার সিটু এবং আইএনটিটিইউসি-র প্রতিনিধি এবং ওই দুই শ্রমিক সংগঠনের বাইরে থাকা শ্রমিকদের (যাঁদের বিরুদ্ধে টানা ২৩ ঘণ্টা পদাধিকারীদের ঘেরাওয়ের অভিযোগ রয়েছে) প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন উলুবেড়িয়ার সহকারী শ্রম কমিশনার ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি জানান, কারখানা খোলার বিষয়ে সব পক্ষই একমত হয়েছে। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ এক দিন সময় চেয়েছেন। অনুরোধ মেনে আজ, শুক্রবার ফের বৈঠক হবে। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে আমার কাছে রিপোর্ট এসেছে।” ওই কারখানার ম্যানেজার (এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আলোচনা সদর্থক হয়েছে। শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবি তুলতেই পারেন। তাঁদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতেও প্রস্তুত। আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে জানানো হবে। তিনি বিদেশে। তাঁর মতামত জেনে শুক্রবারের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।” কারখানার খোলার সেই ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ অবশ্য ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর।
প্রায় ৩০ বছরের পুরনো ওই কারখানাটি মূলত রফতানিযোগ্য ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদন করে। কারখানার প্রায় সাড়ে ৭০০ শ্রমিকের অধিকাংশই ঠিকার ভিত্তিতে কাজ করেন। ৬৫ জন রয়েছেন সংস্থার ‘পে-রোলে’। তাঁরাও দৈনিক মজুরি পান। তাঁরা কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে ঘিরেই গোলমাল। মঙ্গলবার বিকেল থেকে ২৩ ঘণ্টা অভিজিৎবাবু-সহ তিন পদাধিকারীকে কারখানার ভিতরে ঘেরাও করে রাখা হয়। তাঁদের সঙ্গে ভিতরে আটকে পড়েন আরও ৫৫ শ্রমিক। ঘেরাও চলাকালীনই বুধবার সকালে কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ঘেরাওয়ের পিছনে ‘বহিরাগত’দের হাত আছে, অভিযোগ অভিজিৎবাবুর। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের একাংশ যে ভাবে আমাদের ঘেরাও করলেন এবং পুলিশ যে ভাবে নিষ্ক্রিয় থাকল তাতে বহিরাগতদের মদত রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ সব না ঘটে তা পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে হবে। কারখানা চালাতে আপত্তি নেই।” শ্রমমন্ত্রীও বলেন, “যে ভাবে কারখানার পদাধিকারীদের ঘেরাও করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন শ্রমিকেরা, তা আমাদের সরকার সমর্থন করে না। আগে জানলে ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু কেউই আমাকে জানাননি।”
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের তরফে এ দিনের বৈঠকে সুকুমার রায় বলেন, “আমরা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। সহকারী শ্রম কমিশনার ও কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। শুক্রবারের বৈঠক নিয়ে আমরা আশাবাদী।” আর শ্রমমন্ত্রীর কথায়, “কারখানার মালিকের সঙ্গে দেখা হলে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাই। তাঁকে বলব, শিল্প করা মানে কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা নয়। কারখানার শ্রমিকদের অনেককেই নূন্যতম মজুরি দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ কানে এসেছে। অভিযোগ কতটা সত্য এবং নির্দিষ্ট আইন মেনে কারখানা চলছে কি না, তা জানতে শ্রম দফতর খোঁজখবর নেবে।” |