ভোটের ঢাকে কাঠি ত্রিপুরায়, তৎপরতা শুরু সব শিবিরেই
ক দিকে সপ্তম বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরার প্রচেষ্টা, অন্য দিকে পরিবর্তনের হাওয়া তুলে ক্ষমতাসীন দলকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের প্রয়াস। আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচনের দিন ঘোষণা বাকি থাকলেও, ত্রিপুরায় ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েই গিয়েছে বেশ ক’দিন আগে।
সিপিএমের ছাত্র সংগঠন, এসএফআই রাজ্যে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে স্থানে স্থানে মিছিল করে চলেছে। পি সুন্দরাইয়ার জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের মাধ্যমে প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরিদের এনে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করছে সিপিএম। বসে নেই প্রধান বিরোধী দল, কংগ্রেসও। গত কালই ‘পরিবর্তন যাত্রা’র নামে ডাকা দলীয় সমাবেশে ভোটের ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়েছে তারাও। রাজ্যজুড়ে সভা-সমিতি করছে আইএনপিটি, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো ‘ছোট’ দলগুলিও।
ভোটের জন্য কী ভাবে তৈরি হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস? প্রদেশ সভাপতি সুদীপ রায়বর্মনের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে পালা বদল নিঃসন্দেহে আমাদের এ বার বাড়তি মনোবল জোগাচ্ছে। আসলে রাজ্যের মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। তা কাজে লাগাতে আমরা প্রস্তুত।” তবে ভোটের আগে পরবর্তী ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে কংগ্রেস কারও মুখই এখন তুলে ধরতে রাজি নয়। সুদীপবাবুর বক্তব্য, দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে মুখ্যমন্ত্রী যিনিই হোন না কেন, কংগ্রেস রাজ্যবাসীকে সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি সরকার দিতে বদ্ধপরিকর। পরিবর্তনের ব্যাপারে আশাবাদী কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী, আইএনপিটি-ও। দলের সভাপতি বিজয় রাংখলের দাবি, “এ বার সর্বকালের সেরা ফলাফল করব আমরা।” পাশাপাশি, তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই নির্বাচনে আমরা যে কোনও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ব্লকে ব্লকে দুর্নীতি, ব্যাপক নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা আর আমরা চলতে দেব না।’’ আর সিপিএম নেতৃত্বের দুশ্চিন্তা রাংখলের ব্যবহার করা এই ‘যুদ্ধ’ শব্দেই। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী ভোটে রাংখলরা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সাহায্য না নেয়!
তবে রাজনৈতিক ভাবে সিপিএমের মনে যাই থাক মুখে তার প্রতিফলন নেই। বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করে রাজ্য কমিটির মুখপাত্র গৌতম দাস বলেন, “সরকারের কাজকর্মের ভিত্তিতেই ভোট চাইব আমরা। মানবসম্পদ ও মাথাপিছু আয়ে উত্তর-পূর্বের সেরা রাজ্য ত্রিপুরা। শিক্ষার হারও ক্রমশ বাড়ছে। কৃষি, পশুপালন, মাছ উৎপাদন—সব দিকেই এগিয়ে এই রাজ্য। জঙ্গিসমস্যা নিশ্চিহ্ন। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নিয়মিত কাজ পেয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতি ঘটেছে। শহরেও একই আদলে রাজ্য সরকার চালু করেছে ‘টুয়েপ’নগর রোজগার যোজনা।” গৌতমবাবুদের দাবি, “গোটা দেশে একমাত্র ত্রিপুরাতেই এই প্রকল্প রয়েছে।” এ ছাড়া রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সুষম উন্নয়ন হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তাঁদের সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দিচ্ছে পার্টিই। গৌতমবাবু জানান, “বিপিএল ও অন্ত্যোদয় যোজনায় মাত্র দু’ টাকা দরে পরিবারপিছু মাসে ৩৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে দেওয়া হচ্ছে ৬ টাকা ১৫ পয়সা দরে ২২ কেজি করে চাল।” এত কিছুর পরেও কী প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বইতে পারে? পাল্টা-প্রশ্ন করেই ফেলেন ত্রিপুরা সিপিএমের ডাকসাইটে নেতা গৌতম দাস।
তিনি বলেন, ভোটকে সামনে রেখে দলের সভা, মিছিল-সহ জনসংযোগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে বিভিন্ন গণ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমাবেশ। এ ছাড়াও দলের প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ। সরকার পরিচালনার কথা মাথায় রেখে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। থাকবে কিছু নতুন মুখও। শারদোৎসবের পর পুরো তালিকা একযোগে প্রকাশ করা হবে। জোট নিয়ে এ বার কোনও মতভেদ নেই বলেই তাঁর দাবি। গত বছর ফরওয়ার্ড ব্লক একক ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এ বার তাঁদেরও পাশে পাবেন বলে নিশ্চিত গৌতমবাবু।
অন্য দিকে, গোটা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মানিক দেব। ভোটের চেয়ে তাঁকে এখন বেশি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে সংগঠনের প্রাথমিক কাজকর্মে। নিজেই স্বীকার করেন, ত্রিপুরায় এত দিন তাঁদের সাংগঠনিক কাঠামোই ছিল না। ১ অগস্ট হয়েছে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য কমিটি, সব ক’টি জেলা কমিটি এবং শাখা সংগঠন। এখন তিনি ঘুরে ঘুরে ব্লক কমিটি তৈরি করছেন। তবে যাকে দেখে ত্রিপুরায় পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস, সেই দিদি-র দলের রাজ্য নেতা কিন্তু উল্টো কথাই শোনালেন। সিপিএমকে বিশাল শক্তি বলে উল্লেখ করে মানিক দেব বলেন, ‘‘এদের মোকাবিলা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন অ-বাম মহাজোট। মহাজোট না হলে কংগ্রেসের আসন গত বারের চেয়েও কমে যেতে পারে।’’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.