নির্দিষ্ট শর্ত না মানায় আজ চারটি কয়লা ব্লকের বণ্টন বাতিল করে দিল কয়লা মন্ত্রক।
কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য গত জুলাই মাসে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীকে। ব্লক পেয়েছে এমন ৫৮টি সংস্থা সেগুলির উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য কী পদক্ষেপ করেছে তা খতিয়ে দেখার পর ওই গোষ্ঠী চলতি সপ্তাহেই প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টের সুপারিশ মেনেই আজ ওই চারটি কয়লা ব্লক বণ্টন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়লা মন্ত্রক সূত্রের খবর, আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী সবে প্রথম রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যতে একাধিক রিপোর্ট জমা দেবে ওই গোষ্ঠী। ফলে কয়লা মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, যে সংস্থাগুলি কয়লা খনি পাওয়া সত্ত্বেও এ যাবৎ কোনও কাজ শুরু করেনি এই রকম আরও বেশ কিছু সংস্থার বণ্টন ভবিষ্যতে বাতিল হতে পারে।
বণ্টন বাতিলের সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে ফের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, কয়লা বণ্টন নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা আজ বাতিলের সিদ্ধান্তেই প্রমাণিত। ফলে আজ বিজেপির কোর গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী দিনেও প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সোচ্চার থাকবে দল। কোর গ্রুপের বৈঠকের পর বিজেপি নেতা অনন্তকুমার জানান, “প্রধানমন্ত্রী ইস্তফার দাবিতে আগামী সপ্তাহ থেকে রাস্তায় নামবে দল।” পাল্টা রণকৌশল হিসাবে আজ কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি তুলেছে এনডিএ আমলে কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। তাই বিরোধী দলের উপর রাজনৈতিক চাপ বজায় রাখতে কংগ্রেস নেতৃত্ব বাজপেয়ী জামানায় হওয়া কয়লা ব্লক বণ্টনের বিষয়টি সিবিআই-কে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে।
বাদল অধিবেশন চলাকালীন বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছিল, কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও সোচ্চার হবে দল। রণকৌশল ঠিক করতে আজ দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে বৈঠকে বিজেপির কোর গ্রুপের বৈঠক বসে। বৈঠকে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি থেকে কোনও ভাবেই দল সরে আসবে না। অনন্তকুমার বলেন, “আগামী ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশব্যাপী ‘প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দো’ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।”
এ দিকে বিজেপির আক্রমণের পাল্টা জবাবে কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকার এনডিএ আমলের কয়লা খনি বণ্টনের তদন্ত শুরু করার বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছে। দল মনে করছে, নিলাম না করেই এনডিএ আমলে কয়লা খনি বণ্টন করা হয়েছিল। দলের যুক্তি, বাজপেয়ী আমলেও নিলাম না করে কয়লা খনি বণ্টন করা হয়েছিল। তাই ইউপিএ যদি দোষী হয় তাহলে একই নিয়মের কারণে অভিযুক্ত হওয়া উচিত এনডিএ-র। ফলে এখন বিজেপির অস্ত্রেই তাদেরকে মোকাবিলা করার বিষয়ে এখন চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্র। আজ প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, “১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এনডিএ-র আমলে যে একাধিক কয়লা ব্লক বণ্টন করা হয়েছিল তাতে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে সরকারের কাছে। ওই অভিযোগগুলিও কেন্দ্র সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে।”
কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই আজ যে ভাবে চারটি সংস্থার বণ্টন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে তাতে কিছুটা হলেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি ওই কয়লা ব্লক পাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছিল। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানা
গিয়েছে, দেশের প্রায় দশটি বড় সংস্থা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যদি ওই সংস্থাগুলির কয়লা ব্লকের বরাত বাতিল করে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের অর্থ কী ভাবে আদায় করবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই কিছু সংস্থা সংশ্লিষ্ট ব্লক থেকে কয়লা তোলার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেই যুক্তি দেখিয়ে কয়লা মন্ত্রকের বক্তব্য, যদি কোনও সংস্থা আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীর সামনে তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারে যে তারা কয়লা ব্লকে কাজ শুরু করে দিয়েছে তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের বন্টন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা কম। |