ধানের অভাবী বিক্রি ঠেকানোর অন্যতম উপায় হিসেবে রফতানিযোগ্য চালের উৎপাদন বাড়িয়ে তা বিদেশে পাঠানোর কথা ভাবছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু শুধু উৎপাদন করলেই হবে না। বিদেশে চাল পাঠানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র চাই। এত দিনে পশ্চিমবঙ্গকে বিদেশে চাল রফতানি করার সেই অনুমতি দিল কেন্দ্র।
রাজ্য সরকার প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছে, গোবিন্দভোগ ও তুলাইপাঞ্জির মতো কিছু সুগন্ধি চাল রফতানি করা হবে। পরে ভাল জাতের সরু চালও পাঠানো হবে বিদেশে। বৃহস্পতিবার মহাজাতি সদনে রাজ্যের চালকল-মালিকদের সঙ্গে এক আলোচনাসভায় কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এ কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপনারায়ণ মজুমদার জানান, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাংলার চাল অন্য রাজ্য ও বিদেশে রফতানির জন্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকী গণবণ্টন ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের চাল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে তা ভিন্ রাজ্যে বিতরণ করে, তারও চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যে চালের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অভাবে পড়ে চাষিরা কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এটাই ‘অভাবী’ বিক্রি। এটা বন্ধ করতে পারলে কৃষকদের দুরবস্থার কিছুটা মোকাবিলা করা যেতে পারে। অভাবী বিক্রি বন্ধ করার জন্য সরকারি ভাবে ধান কেনার ব্যবস্থা তো আছেই। সেই সঙ্গে বিদেশে রফতানি করার মতো চাল পাওয়ার জন্য যদি বিশেষ জাতের ধান চাষ করা যায়, তাতে কৃষক এবং রাজ্য সরকার উভয়েরই লাভ। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে চাল রফতানির অনুমতি দেওয়ায় এ বার সেই পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাই কৃষকদের বিশেষ ধরনের ধান চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার লক্ষ্য পূরণে রাজ্য সরকার এক হাজার নতুন চালকল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যৌথ উদ্যোগে নতুন চালকল চালু করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “রাজ্যে এখন ১০০৭টি চালকল রয়েছে। তার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৩০০টি। রাজ্যের ১৫৪টি ব্লকে চালকল নেই। চলতি বছরে প্রতিটি ব্লকেই ধানকল চালু করা হবে।”
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের চালকল-মালিকেরা এলাকার কৃষকদের ধান না-কিনে বিহার থেকে ধান কিনেছেন। কারণ সেখানে ধানের দাম কম। এর ফলে এলাকার চাষিরা এ বার ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাননি। বনমন্ত্রী বলেন, “সরকার অনেক দেরিতে ধান সংগ্রহ অভিযানে নামায় ক্ষুদ্র চাষিরা অভাবে ধান বেচতে বাধ্য হয়েছেন।” কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও কার্যত এ কথা মেনে নিয়েছেন। চালকল-মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, রাজ্যে মোট উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ কিনলেই হবে না। যাতে উৎপাদিত ধানের সবটাই কেনা যায়, সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ধানের ‘বাইপ্রোডাক্ট’ বা উপজাত পণ্য থেকে শিল্প স্থাপনেও উৎসাহ দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। এ দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চালকল-মালিকদের জানান, ধান থেকে অন্তত ১৫০ রকমের উপজাত পণ্য পাওয়া যায়। সেই সব উপজাত পণ্য নিয়ে শিল্প গড়ার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। |