শুধু মাত্র নীতি তৈরি নয়। সেই নীতি কার্যকর হলে আখেরে কতটা লাভবান হবে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প, তা যাচাই করে নিতে চায় রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় বসতে চলেছে রাজ্য। আলোচনার বিষয় ‘ইনসেনটিভ’ প্রকল্প-সহ তথ্যপ্রযুক্তি নীতির খুঁটিনাটি। সরকারি সূত্রের খবর, যাদের জন্য নীতি, সেই বিনিয়োগকারীদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে এই বৈঠকের আয়োজন করছে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বুধবার সল্টলেকে উন্নয়ন ভবনে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের মুখোমুখি হতে চলেছেন শিল্প তথা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও দফতরের সচিব-সহ অন্য কর্তারা। উপস্থিত থাকার কথা তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির স্থানীয় সদস্যদেরও। বড় সংস্থার পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক অফ ইন্ডিয়া প্রকল্পে নথিভুক্ত ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে।
ক্ষমতায় আসার পরেই শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দফতরের সচিব ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘কোর কমিটি’ তৈরি করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি মাসে নিয়মিত বৈঠকে বসে কমিটি। শিল্পমহলের বিভিন্ন সমস্যা ও সুপারিশ আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু সেই বৈঠকে সরকারি নীতি কী ভাবে প্রয়োগ করা হবে, তার হদিস মেলে না। এই বৈঠকগুলিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তুলনায় কম গুরুত্ব পায় বলেও সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ।
অন্য দিকে তথ্যপ্রযুক্তি কমিটি পৃথক ভাবে তৈরি হলেও সেই কমিটির বৈঠক এ পর্যন্ত কমই হয়েছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি নীতি নিয়ে আলোচনার সুযোগও তেমন হয়নি। শিল্পমহলের চাহিদা ও সরকারি নীতির মধ্যে ফাঁকটা ভরাট করতেই এ ধরনের বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। সেই ভাবনার সূত্র ধরেই নীতি সংশোধনের পথও খোলা থাকছে। বিনিয়োগকারীদের মতামত যুক্তিযুক্ত হলে তা ঠাঁই পাবে নীতিতে।
তথ্যপ্রযুক্তি নীতির সামগ্রিক দিশা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ‘ইনসেনটিভ’ বা আর্থিক সুবিধা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট কর্তারা। নীতিতে জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি ‘হাব’ তৈরির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে লগ্নি টানতে অ্যানিমেশন ও গেমিং-এর উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য। একই সঙ্গে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে। যেমন ৫০০ থেকে ৫০০০ বর্গ ফুট অফিসের জায়গা ভাড়া নিলে সেই ভাড়ার টাকার উপরে ভর্তুকি দেবে সরকার। একই ভাবে বিদ্যুৎ বিল ও কর্মী নিয়োগের খরচের উপরেও ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দেবে রাজ্য। এ সব বিষয়ে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলির বক্তব্যও জানতে চায় সংশ্লিষ্ট দফতর।
এর আগে জমি নীতি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘ফোকাস-ওয়েস্ট বেঙ্গল’ শীর্ষক বৈঠকে প্রশাসন শিল্পমহলের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। উদ্দেশ্য জমি-সহ শিল্প নিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক নীতির ব্যাখ্যা। আগামী সপ্তাহের বৈঠকেও তথ্যপ্রযুক্তি নীতি নিয়ে একই ধরনের আলোচনা চায় রাজ্য সরকার। |