জড়িত নামী স্কুলের পড়ুয়ারাও
নির্জন পথে ব্যাগ ছিনিয়ে উধাও কিশোরেরা
চেহারা বা পোশাক-আশাক দেখে সন্দেহ করার জো নেই। স্কুটি অথবা মোটরবাইকে চেপে আসা নিরীহ চেহারার দু’তিন জন কিশোর। নির্জন রাস্তায় পথচারী একটু অন্যমনস্ক হলে অবশ্য এরাই হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। বাইকে চড়ে যেতে যেতে এক ঝটকায় ছিনিয়ে নিচ্ছে হাতব্যাগ। পথচারী ঠিক মতো বুঝে ওঠার আগেই গতি বাড়িয়ে পগারপার।
শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এমনই এক দল ছিনতাইবাজ। আসানসোলে সম্প্রতি তিন জন কিশোরকে গ্রেফতার করার পরে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই অভিজাত পরিবারের সন্তান। শহরের নাম করা স্কুলের ছাত্র। চোখ-মুখ, পোশাক দেখে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার উপায় নেই, ছিনতাইয়ের মতো কোনও কাজে তারা জড়িত থাকতে পারে।
পুলিশ জানায়, শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দল কিশোর। বয়স ১৬ বছরের আশপাশে। এক সঙ্গে দুই বা তিন জনের বেশি থাকে না তারা। অল্পবয়সী এই মোটরবাইক আরোহীরা চলন্ত অবস্থাতেই ছিনতাই করছে, মাস কয়েক ধরেই এমন বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। সম্প্রতি এক স্কুলশিক্ষিকা রঞ্জনা মুন্সি অভিযোগ করেন, ছুটির পরে সহকর্মীর সঙ্গে রিক্সায় চেপে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। হঠাৎ পিছন থেকে মোটরবাইকে চেপে আসা তিন কিশোর তাঁর হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালায়। একই কায়দায় ব্যাগ ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন রাসডাঙ্গা এলাকার অনুভা হালদার। এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলেও অপরাধীদের ধরতে হিমসিম খাচ্ছিল পুলিশ। সম্প্রতি এমনই একটি ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে অপরাধীরা ঘটনাস্থলেই কিছু সূত্র ফেলে রেখে যায়। তা ধরেই নাগাল মেলে ওই তিন কিশোরের। আর তাদের জেরা করে পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ।
পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে একটি ছিনতাই চক্রের হদিস মিলেছে। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, তাদের শিকার মূলত পথচারী মহিলারা। কারণ, মহিলারা তাদের পিছু ধাওয়া করতে পারবে না। নির্জন রাস্তায় মহিলাদের চিৎকার শুনে লোকজন জড়ো হওয়ার আগে বাইক চালিয়ে চম্পট দেওয়াও সুবিধাজনক। আর সে কারণেই তাদের পছন্দ রাসডাঙা, রেল কলোনি এলাকা, আসানসোল স্টেডিয়াম লাগোয়া অঞ্চল, কল্যাণপুর সরকারি আবাসন এলাকার মতো জায়গা।
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করেছে এই সব অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত তারা মোট ৯টি ছিনতাই করেছে। ছিনতাই করা কিছু সামগ্রীও উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সময়েই তারা শিকার ঠিক করে নেয়। শিকারের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে করতে মওকা বুঝে ছোঁ মেরে ব্যাগ তুলে নিয়ে পালায়।
এমন স্কুলপড়ুয়ারা কেন অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, সে প্রশ্নে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সদর) সুরেশ কুমারের বক্তব্য, “প্রাথমিক তদন্তের শেষে যেটুকু বুঝেছি, অতিরিক্ত লোভই এদের এই পথে নামিয়েছে।” পুলিশের দাবি, ধৃতদের বারবার জেরা করে এবং তাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বুঝেছে, এক সময়ে ওই কিশোরেরা যা দাবি করেছে, সব প্রয়োজনই মিটিয়েছেন অভিভাবকেরা। কিন্তু সন্তানের চাহিদা সীমা ছাড়াচ্ছে বুঝে এক সময়ে রাশ টানতে বাধ্য হয়েছেন বাবা-মায়েরা। আর তার ফলেই বিপত্তি। প্রয়োজন মেটাতে ছিনতাইয়ের পথ নিয়েছে এই কিশোররা।
ছিনতাই করা জিনিসপত্র এই কিশোররা কোথায় বিক্রি করে, তারও হদিস মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। এডিসিপি (সদর) সুরেশ কুমার জানান, আসানসোলেই কয়েক জন যুবক আছে যারা এই সব চোরাই সামগ্রী কেনে। ধৃত কিশোরদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে। পুলিশের দাবি, তাকে জেরা করে আরও কয়েক জন কিশোরের নাম পাওয়া গিয়েছে যারা এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.