শরতের মেঘ। ব্যস্ততা কুমোরপাড়ায়। ছুটোছুটি পুজো উদ্যোক্তাদের। দোরগোড়ায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। কিন্তু বাতাসে খুশির আমেজ এলেও মন ভাল নেই মালদহের চাঁচল মহকুমার পাট চাষিদের। কেউ ওঁদের বলতে পারছেন না এ বার পুজো কাটবে কেমন। বলবেন কেমন করে? এ বছর বিঘা প্রতি পাট চাষে খরচ হয়েছে ৭২০০ টাকা। উৎপাদিত পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এই পরিস্থিতিতে পুজোর আগে মাথায় হাত চাষিদের। পুজোয় ছেলেমেয়েদের জন্য কেনাকাটায় ভরসা ছিল পাট। আশা ছিল ভাল দাম মিলবে। চুটিয়ে কেনাকাটা করবেন। কিন্তু কোথায় কী? পুজোর বাজার পরের কথা। এখন পাট বিক্রি করে ধারে নেওয়া টাকা শোধ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন তাঁরা। চাষিদের দশায়চিন্তায় ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের আশঙ্কা, এ বার তেমন জমবে না পুজোর বাজার। সমস্যার কথা জানেন কৃষি দফতরের কর্তারা। চাঁচল মহকুমা কৃষি আধিকারিক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিঘা প্রতি খরচের টাকা চাষি তুলতে পারছে না। ওই পরিস্থিতিতে পুজোর কথা ভাববে কেমন করে? মনে হচ্ছে বাজার জমবে না।” গত বছরের চেয়ে এ বার পাটের উৎপাদন বিঘা প্রতি ২৫ শতাংশ কম হয়েছে। চাষের পরে বৃষ্টি না থাকায় জলাভাবে পাট ঠিক ভাবে বাড়েনি। কমেছে গাছের সংখ্যা। বিঘা প্রতি উৎপাদন কমে চাষের খরচ বেড়েছে। পাট কাটার পরেও জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে এলাকায়। জলাভাবে ৭ শতাংশ চাষি পাট পচাতে পারেননি। পাট চাষিরা জানান, বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়েছে দুই থেকে আড়াই কুইন্টাল। বাজারে কুইন্টাল প্রতি দাম মিলছে আড়াই হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। খরচ উঠছে না। হরিশ্চন্দ্রপুরের বোড়ল এলাকার চাষি সাকরাতু দাস দেড় বিঘা জমিতে সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করে পাট চাষ করেন এ বার। কাছাকাছি পচানোর জল না পেয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে অন্য এলাকায় পাট পচানোর ব্যবস্থা করেন। উৎপাদিত পাট বিক্রি করে পেয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার টাকা। ওই চাষির কথায়, “পুজোর কেনাকাটা এ বার হবে না। মহাজনের টাকা শোধ করতে সব চলে যাবে।” চাঁচলের চাষি সোহরাব আলি বলেন, “আড়াই বিঘায় ২১ হাজার টাকা খরচ করে পাট চাষ করে ১২ হাজার টাকা পেয়েছি। পথে বসতে হবে। ঈদ ভাল কাটেনি। এ বার পুজোটাও নষ্ট হল।” |