অবসর নেওয়ার পর চিকিৎসক প্রদীপ সরকারকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপারের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার উপর শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি নিজে ঝক্কি নিতে চান না বলেও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তার পরেও কেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের মতো জায়গায় এক জন পূর্ণ সময়ের সুপার রাখা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থায়ী সুপার না-থাকায় হাসপাতাল পরিচালনা করতে গিয়ে ওষুধের সঙ্কট থেকে কর্মীদের নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অবসর নেওয়ার পর প্রদীপবাবুকে সুপারের দায়িত্ব সামলাতে দেওয়া এবং স্থায়ী সুপার নিয়োগ না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। বুধবার হাসপাতালে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার মুকুলচন্দ্র রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। প্রদীপবাবু অসুস্থ থাকায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন মুকুলবাবু। কুষ্ঠ প্রতিরোধ প্রকল্পের জোনাল অফিসার পদে থাকায় তাঁর পক্ষেও এই দায়িত্ব বেশ দিন সামলানো শক্ত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রদীপবাবু অবশ্য এ সব ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। রুদ্রবাবু বলেন, “শারীরিক সমস্যার জন্য প্রদীপবাবু অব্যাহতি চাইছেন। তবে তিনি সুস্থ হলে আমরা তাঁকে অনুরোধ করব। এই হাসপাতালে পূর্ণ সময়ের জন্য একজন স্থায়ী সুপার নিয়োগ করতে স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।” রুদ্রবাবু জানান, চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা হাসপাতালের প্রশাসনিক বিষয়ের দায়িত্ব নিলে তাঁরা ঝামেলায় পড়তে পারেন। সেই ভয় থেকে অনেকে এই দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। ওই ভয় অমূলক নয় বলেই অনেকে দাবি করেছেন। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, প্রদীপবাবুর অসুস্থতার জন্য ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রঞ্জিত ভকতকে। একজন এক্স-রে টেকনিশিয়ানকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে সেবক রোডের দুই মাইলে টিবি হাসপাতালে বদলি করা নিয়ে একটি কর্মী সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়। শুধু তাই নয় তাঁর দফতরে গিয়ে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। তার জেরে দিন কয়েক আগে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন। সমস্যার কথা স্বীকার করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিকও। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় এই হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব সামলেছেন প্রদীপবাবু। ২০১১ সালে তিনি অবসর নেন। মাস ছয়েক আগে তাঁকে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করে সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এক জন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসককে এ ভাবে সুপারের দায়িত্ব দেওয়া বেআইনি। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এ ভাবে চালানো দুর্ভাগ্যজনক। অবিলম্বে পূর্ণ সময়ের একজন সুপার নিয়োগ করা জরুরি।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীরবাবু জানান, হাসপাতালে পূর্ণ সময়ের জন্য একজন স্থায়ী সুপার যে ভীষণ জরুরি তা স্বাস্থ্য দফতরকে লিখিত ভাবে তিনি জানিয়েছেন। ২০০৫ সালে শিলিগুড়ি মহকুমা হাসপাতাল জেলা হাসপাতালে উন্নিত হলেও সরকারি ভাবে এতদিন তা নথিভুক্ত করা হয়নি বলে এ দিন অভিযোগ তোলেন রুদ্রবাবু। তিনি জানান, সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট নথি উদ্ধার করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে তাঁরা পাঠিয়েছেন। অশোকবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি ভাবেই এই হাসপাতাল জেলা হাসপাতালের মর্যাদা পেয়েছিল। রুদ্রবাবুরা খুঁজে দেখলেই সব নথিপত্র পাবেন। |