মত বিশেষজ্ঞদের
লিভার ও খাদ্যনালীর সাময়িক ক্ষতি ডেঙ্গিতে
ডেঙ্গির ভাইরাসের কবলে লিভারের স্থায়ী কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে না খাদ্যনালীরও। লিভার এবং খাদ্যনালীকে ‘বিশ্রাম’ দিলে (অর্থাৎ, হাল্কা খাবার খেলে ও অনিয়ম না করলে) মাসখানেকের মধ্যেই শরীরের ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বাভাবিক কাজ শুরু করে দেয়। এমনই মন্তব্য করলেন এসএসকেএম হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ লিভার ডিজিজ’-এর চিকিৎসক-গবেষকেরা।
এ বারের ডেঙ্গি ভাইরাস শরীরে ঢুকে এমন কয়েকটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, যার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না চিকিৎসকেরা। তলপেটের ডান দিকে ব্যথা, ডায়েরিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস এ বারই প্রথম লক্ষ করেছেন চিকিৎসকেরা। অনেকের ক্ষেত্রে মলের সঙ্গে রক্তও বেরোচ্ছিল, যার রং পুরো আলকাতরার মতো। লিভারের বিভিন্ন উৎসেচক এমন ভাবে ভাঙছিল, যা নিয়ে উদ্বেগের অন্ত ছিল না। এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অফ লিভার ডিজিজ’-এর চিকিৎসক-গবেষকেরা ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা করে দেখেছেন, ঠিকঠাক খাদ্যাভ্যাস থাকলে লিভার বা খাদ্যনালীর স্থায়ী কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
ডেঙ্গি থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে পেটের অসুখ, ক্ষুধামান্দ্য, বর্ধিত লিভার নিয়ে বহু রোগী আসছেন এসএসকেএমের লিভার চিকিৎসাকেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “ডেঙ্গির ভাইরাসে লিভারের ক্ষতি হলেও তা স্থায়ী কোনও সমস্যা সৃষ্টি করবে না। আমাদের ভাষায় বলতে গেলে ডেঙ্গি ভাইরাসের আক্রমণে ক্রনিক (স্থায়ী) লিভার ডিজিজ হয় না। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণের কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই লিভার স্বাভাবিক হয়ে যায়। যাঁরা ডেঙ্গিতে ভুগে আমাদের কাছে আসছেন, তাঁদের আমরা সেই কথাই বলছি।” একই ভাবে খাদ্যনালীও তার সাময়িক ক্ষতি সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য অভিজিৎবাবুর।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ বার কলকাতায় যে ডেঙ্গি হানা দিয়েছে, তা লিভারে ঢুকে সেখানে প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছিল। পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর বিশ্লেষণ, “অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, ডেঙ্গি রোগীর লিভারের রক্ততঞ্চনকারী প্রোটিন ভেঙে যাচ্ছে, যা রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে। এর ফলেও অনেক সময়ে শরীরের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।” অন্ত্রে কোলাইটিসের মতো কোনও সমস্যার জন্য তলপেটের ডান দিকে ব্যথা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাই ডেঙ্গি রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
ডেঙ্গি ভাইরাসের প্রতিক্রিয়ায় শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হলেই রোগী ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত লিভার ও খাদ্যনালীর শুশ্রূষার জন্য শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। তাই ওই সব দেহাংশের বিশ্রাম প্রয়োজন। হাল্কা খাবার এবং অতিরিক্ত জলই রোগীর সব চেয়ে ভাল পথ্য। লিভার বিশেষজ্ঞেরা জানান, শরীর সেরে ওঠার এই পর্বে মানসিক এবং শারীরিক চাপ যত কম থাকে, লিভার তত তার নিজের ক্ষমতা ফিরে পায়। শরীরকে বেশি কাজ করতে হলে দরকার বেশি শক্তি। আর তা জোগাতে লিভারকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। তৈরি করতে হয় অতিরিক্ত উৎসেচক এবং প্রোটিন। তাই সেরে ওঠার এই সময়টায় কায়িক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা।
ডেঙ্গির জীবাণুর প্রভাবে শরীরের শ্বেত কণিকার সংখ্যা অনেক সময়ে অনেকটা কমে যায়। অস্থিমজ্জায় ভাইরাসের আক্রমণের ফলেই এমন হচ্ছে বলে মত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের। তাঁরা বলছেন, শ্বেত কণিকার সংখ্যা চার হাজারের কম থাকলে সেই ব্যক্তির শরীরে পুনরায় অন্য যে কোনও রোগের জীবাণু ঢুকলে তার সঙ্গে শরীর তেমন ভাবে লড়তে পারে না। অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সম্ভাবনা তাই প্রবল। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষায় শরীরের অবস্থা জেনে তার পরেই ডেঙ্গি রোগীর কর্মজীবনে প্রবেশ করা উচিত।
অন্য দিকে, যাদবপুর-সহ ১১ ও ১২ নম্বর বরোর কিছু এলাকায় মশা মারার ধোঁয়া ছড়ানোর কাজে গাফিলতির অভিযোগে কয়েক জন পুরকর্মীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুর-প্রশাসন। ডেঙ্গি রোধে ওই এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধোঁয়া ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। প্রমাণ রাখতে প্রতিটি পরিবারের সই নিতে বলা হয়েছিল কর্মীদের। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে ধোঁয়া না ছড়িয়ে ‘জাল’ সই করে কাজ দেখানো হয়েছে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে জানা যায়, কয়েকটি এলাকায় ধোঁয়া ছড়ানোই হয়নি।” এ ধরনের গাফিলতি ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ না করে, সে জন্য দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য দফতর। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.