বারাসতে অপরাধ দমন
সাধারণ মানুষকে পাশে টানল পুলিশ
গায়ে খাকি উর্দি। কাঁধে জ্বলজ্বল করছে তারা। কিন্তু কোমরের খাপে পিস্তল নেই।
জেলা পুলিশকর্তাদের সঙ্গে এক সারিতেই হাঁটলেন গেঞ্জি গায়ে কৃষক, আটপৌরে শাড়ির বধূ। হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা, “অপরাধীরা হুঁশিয়ার।”
লাঠি-বন্দুক ছেড়ে কাঁধে হাত। বারাসতে অপরাধ দমনের জন্য এ বার এ ভাবেই গাঁধীগিরির পথ ধরল পুলিশ।
দিন কয়েক আগে যে কদম্বগাছিতে মত্ত দুষ্কৃতীদের বেলেল্লাপনার প্রতিবাদ করে খুন হন চিকিৎসক, যে কদম্বগাছিতে চোলাই মদ, সাট্টার রমরমা আর মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার কথা বলতে গিয়ে শিউরে উঠেছিলেন গ্রামের মহিলারা, ফিসফিস করে কেউ কেউ বলেছিলেন, “পুলিশ ওদের সঙ্গে রয়েছে। কিছু বললেই পরে এসে ওরা বদলা নেবে। কী দরকার মুখ খোলার!” সৌজন্যে সেই পুলিশ, বুধবার দুপুরে সেই কদম্বগাছিই দেখল সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অন্য ছবি। যাতে সামিল হলেন সাধারণ মানুষ।
পুলিশের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন এলাকাবাসী। বুধবার, বারাসতে। ছবি: শান্তনু হালদার
শুধু কদম্বগাছিই নয়। বারাসতে টানা দুষ্কর্ম রুখতে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের খোলনলচে বদলেছে সরকার। জেলায় এসে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে মানবিক হওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বারাসতের হাল ফেরাতে এ বার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এমন বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুলিশ।
মেয়েদের স্কুলের শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠকে জানতে চাওয়া হবে ছাত্রীরা রাস্তায় বেরোলে কী কী সমস্যা হয়। কোন মোড়ে কটূক্তি শুনতে হয়, তা-ও যাচাই হবে। কিন্তু অভিযুক্তদের জেলে না পাঠিয়ে বরং তাদের ‘মগজ ধোলাই’ করবে পুলিশ। কারণ, বারাসতে সাম্প্রতিক অপরাধগুলি থেকে পুলিশের ‘শিক্ষা’— অভিযুক্তদের বেশির ভাগ দাগি অপরাধী নয়, বরং অল্পবয়সী কিশোর-যুবক।
ঠিক হয়েছে, বারাসতের ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির কর্মকতাদের নিয়েও সমন্বয় কমিটি গড়বে পুলিশ। ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় অপরাধ হলে নজরদারি করতে বলা হবে ক্লাবকেও। রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ বারাসত থানা (বছর পাঁচেক আগেই এই থানা ভেঙে অন্তত তিনটি থানা করার প্রস্তাব দেন উত্তর ২৪ পরগনার তৎকালীন পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার) এলাকার নজরদারি যে ৭০ জন কর্মীকে দিয়ে হবে না, তা বুঝেছে পুলিশ। পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এ বার কাউন্সিলরদের নিয়েও বৈঠক করবে পুলিশ। ধৃত অপরাধীদের ছাড়ানোর ব্যাপারে রাজনৈতিক তদ্বির যাতে না হয়, সেই আবেদনও রাখা হবে বৈঠকে। আর তার পরেও অপরাধ হলে ‘কঠিন’ হবে পুলিশ। রাতেও চলবে লাগাতার নজরদারি।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় সেই নজরদারি দেখল বারাসতের ডাকবাংলো মোড়। সুনসান রাস্তায় হঠাৎই চারদিক থেকে এসে দাঁড়াল ১০-১২টি পুলিশের গাড়ি। নামলেন পুলিশ সুপার সুগত সেন-সহ জেলার সমস্ত পুলিশকর্তা। অন্ধকারে দু’এক জন যারা ছিল, দৌড় লাগাল। সুগতবাবু জানালেন, কদম্বগাছি, বামনগাছি, বারাসত হয়ে মধ্যমগ্রামেও রাতে চলবে টহলদারি, ধড়পাকড়।
ওই দিনই কদম্বগাছির ক্লাব সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশ। সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার গ্রামবাসীদের নিয়ে মিছিল করা হবে। সোম ও মঙ্গলবার রাতে হানা দিয়ে বেশ কিছু মদ ও সাট্টার ঠেক ভাঙে পুলিশ। হয় ব্যাপক ধড়পাকড়ও। ব্যাস, তাতেই কেল্লা ফতে। আস্থা ফিরে পেয়েই বুধবার পুলিশের সঙ্গে বারাসত-টাকি রোডে এই মিছিল করেন হাজারখানেক গ্রামবাসী। কড়েয়া কদম্বগাছি রেল স্টেশন থেকে বাজার, ঘোষপাড়া হয়ে চড়কতলার মতো ‘বিপজ্জনক’ এলাকাগুলিতেও যায় সেই মিছিল। পুরোভাগে ছিলেন বারাসতের এসডিপিও সুবীর চট্টোপাধ্যায়, বারাসত থানার আইসি পরেশ রায়, স্থানীয় দেগঙ্গার বিধায়ক নুরুজ্জামান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন মীনা ঘোষ। তাঁদের সঙ্গেই পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন গ্রামবাসীরা। সেগুলিতে লেখা ‘চোলাই মদের ঠেক বন্ধ থাকবে’, ‘সাট্টা-গাঁজা দূর হটো’, ‘মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা যাবে না’র মতো স্লোগান। কোনওটিতে আবার ‘ডাক্তারবাবু অমর রহে’-র মতো কথাও।
গীতা সাধু নামে এক গৃহবধূ বলেন, “পুলিশ পাশে হাঁটতেই স্বস্তি পাচ্ছি। মনে হচ্ছে চাপটা কাটল।” রাবেয়া বিবি নামে এক মহিলার কথায়, “ওদের ভয়ে চুপচাপ ঘরে থাকতাম। এখন ওদের বিরুদ্ধে রাস্তায় হাঁটছি। পরিবর্তনটা বুঝতে পারছেন না?” বদলে যাওয়ার সেই আশাতেই রয়েছে গোটা বারাসত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.