চব্বিশ ঘণ্টা আগে পড়শি জেলা নদিয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার পরামর্শ দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার দুই সাংসদ, অধীর চৌধুরী ও মান্নান হোসেন। কিন্তু তাঁদের নিজের জেলা জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সেই ঐক্য বজায় থাকবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ছাড়াও ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার দু’ জন। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সম্পাদক অতীশ সিংহ ওরফে কাল্টু এবং জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বর্ষীয়ান আলি হোসেন মণ্ডল।
নলহাটির বিধায়ক অভিজিৎবাবু ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে তাঁর প্রার্থী হতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাঁর আবেদনপত্র প্রদেশ কংগ্রেস এবং এআইসিসি-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অধীরের স্পষ্ট মন্তব্য, “প্রার্থী কে হবেন সে সিদ্ধান্ত নেবে দলের হাইকমান্ড। তাঁরা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তাঁকেই সমর্থন করব।” অন্য দিকে আলি হোসেন মণ্ডল এবং অতীশ সিংহও প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন জেলা কংগ্রেসের কাছে। সেই আবেদনপত্রও প্রদেশ কংগ্রেস এবং এআইসিসি-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধীর। তবে দলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে অধীর জানান, প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন অভিজিৎই। |
গত সোমবার কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ে জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকার দলীয় বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পুরপ্রধান এবং জেলা কমিটির যে সদস্যরা ওই কেন্দ্রে বসবাস করেন তাঁদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতৃত্বের অধিকাংশের বক্তব্য অনুসারে কিন্তু অভিজিৎবাবুই একটু পিছিয়ে রয়েছেন। ওই বৈঠকে আলোচনা থেকে জানা গিয়েছে, ওই লোকসভা কেন্দ্রে লালগোলা বিধানসভা অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় মোট ভোটারের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই সংখালঘু সম্প্রদায়ের। দ্বিতীয়ত, প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রয়াত শশাঙ্কশেখর সান্যাল ছাড়া ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে এ যাবৎ নির্বাচিতরা সবাই সংখালঘু সম্প্রদায়ের। তৃতীয়ত, প্রতিপক্ষ বামফ্রন্টের এ বারের প্রার্থীও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। চতুর্থত, প্রণব মুখোপাধ্যায় আর তাঁর ছেলে অভিজিৎবাবু একই রকম ‘ওজনদার’ নয়। ফলে ‘বহিরাগতের’ বদলে জেলার কাউকে প্রার্থী করার পক্ষেই মত দিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত দলীয় নেতা কর্মীরা।
অধীর অবশ্য এরপরেও মনে করছেন, দিল্লি যাঁকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন করবে তাঁকেই মেনে নেওয়া হবে। একই কথা মান্নান হোসেনের। এর মধ্যে কোনও গোষ্ঠী কোন্দলের সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা।
এ কথা তাঁদের ‘মনের’ নাকি শুধুই ‘মুখের’ তা নিয়েই দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। তবে এ বার জঙ্গিপুর উপনির্বাচন যে ‘কঠিন’ তা একান্তে মানছেন কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্বের অনেকেই। প্রার্থী নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সত্যিই মাথাচাড়া দিলে ওই ‘কঠিন’ লড়াই কিন্তু কঠিনতর হয়ে উঠবে।
আর সেই ‘কঠিনতর’ লড়াইয়ের জমি কিন্তু ইতিমধ্যে তৈরি করে হয়ে গিয়েছে। ওই লোকসভা এলাকার কয়েকজন জেলাপরিষদ সদস্য ও জঙ্গিপুর মহকুমা কংগ্রেসের অপসারিত সভাপতি-সহ অনেকেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দলের ভারসাম্য নড়ে গিয়েছে কী, প্রশ্ন সেটাই। |