|
|
|
|
হাইকোর্টেই মীমাংসা |
হলদিয়া-সঙ্কটের অবসান, রয়ে গেল এ বি জি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে মিলল সমাধান সূত্র। হলদিয়া বন্দরে থেকে যাচ্ছে পণ্য খালাসকারী সংস্থা এবিজি গোষ্ঠী।
বুধবারই হলদিয়া বন্দরে তারা শেষ কাজ করবে বলে এবিজি আগেই ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যেই মঙ্গলবার একটি জাপানি জাহজের মাল খালাস নিয়ে হলদিয়ায় একটি ক্লিয়ারিং এজেন্টের দফতরে বিক্ষোভ দেখান এক দল শ্রমিক। ওই জাহাজটি এবিজির-র জন্য নির্দিষ্ট বার্থে ঢোকার কথা ছিল। তার পরে এবিজি-র চলে যাওয়াটা মোটামুটি নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। পুরো
বিষয়টি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপও চেয়েছিল এবিজি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্যের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সমস্যার সমাধান হল বুধবার।
কী ভাবে?
এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে হলদিয়া বন্দরে ওই সংস্থার দুটি বার্থে (২ এবং ৮ নম্বর বার্থ) সর্বাধিক জাহাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এবিজি-ও এজলাসেই ঘোষণা করেছে, হলদিয়া বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তারা স্থগিত রাখছে। আদালতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে গিয়ে হলদিয়া বন্দরে ফের আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হলে সরাসরি রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে বলে ঠিক করেছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান মনীশ জৈন বুধবার বলেন,“আমরা প্রথম থেকেই এবিজি-কে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চুক্তির বাইরে গিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য খালাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব ছিল না। তবে দীর্ঘ আলোচনার পর একটা সমাধান সূত্র বেরিয়েছে। ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে যাতে সব চেয়ে বেশি জাহাজ নোঙর করানো যায়, তা দেখা হবে। আদালতে সে কথা বলা হয়েছে। এবিজি আমাদের প্রস্তাবে রাজি। তারা হলদিয়া ছেড়ে যাচ্ছে না। এতে আমরা খুশি।” |
|
এবিজি-র সিইও গুরপ্রীত মালহি বলেন, “আদালতে দাঁড়িয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তাঁরা বলেছেন, ২ ও ৮ নম্বর বার্থ খালি রাখা হবে না। আমরা খালাস করতে না পারলে তখন জাহাজ অন্য বার্থে যাবে।”
বন্দরের এক কর্তা বলেন, আদালতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কার্যকর করা এত সহজ হবে না। জাপানি জাহাজ ‘এম ভি প্রভু মিহিকা’-কে ২ নম্বর বার্থে নোঙর করানো নিয়ে মঙ্গলবারই আইনশৃঙ্খলার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। তা যে আবার হবে না, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। শাসক দল তৃণমূলের লোকেরা ওই সব হামলার পিছনে থাকায় প্রশাসন কতটা সক্রিয় হবে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে এবিজি গোষ্ঠী হলদিয়ায় তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কলকাতা বন্দরকে এ জন্য তারা নোটিসও দিয়েছিল। বন্দর সূত্রের খবর, এবিজি চলে গেলে হলদিয়া বন্দর বছরে অন্তত ১২৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারাত। রোজগারের অঙ্কে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক-প্রাইভেট-পাটর্নারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পটি ভেস্তে গেলে নাব্যতার সঙ্কটে ভোগা হলদিয়া বন্দরের হাল আরও খারাপ হত।
বছর পাঁচেক আগে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক দেশের ১১টি বৃহৎ বন্দরের আধুনিকীকরণের যে নীতি গ্রহণ করেছিল, তারই সূত্রে হলদিয়ার ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে ‘মোবাইল হারবার ক্রেন’ বসিয়ে যন্ত্রনির্ভর পণ্য খালাসের ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এ কাজই করে এবিজি। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষ এবং আধুনিকীকরণ-বিরোধী লবির চাপে হলদিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় ওই সংস্থার। যন্ত্রনির্ভর আধুনিক সরঞ্জাম বাতিল করে ফের কোদাল-বেলচা সহযোগে পণ্য খালাস পদ্ধতি বহাল রাখতে চাইছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ, এমন অভিযোগও ওঠে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এবিজি-কে ধরে রাখতে শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর সেই পথেই শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে এল সমাধান। |
|
|
|
|
|