|
বাগদা-বিপাক কাটাতে কথা বলবেন মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
একটা নয়, দু’টো নয়। শয়ে শয়ে কনটেনার। তাতে ভর্তি বাগদা চিংড়ি। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার জিনিস। আটকে আছে জাপানি নিষেধাজ্ঞার জালে।
নিষেধাজ্ঞা তোলার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যেই জাপানের দ্বারস্থ হয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাতে বরফ গলবে, এমন নিশ্চয়তা এখনও নেই। এই অবস্থায় আসরে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মহাকরণে তিনি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। সেখানে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, মৎস্যসচিব এবং সি-ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ শাখার দুই প্রতিনিধি, রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মোমরেজ আলি। প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পুরো বিষয়টি শোনেন। জানতে চান তাঁর করণীয় কী? কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন অ্যাসোসিয়েশনের
কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন। বৈঠকে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের মৎস্য ক্ষেত্রের উন্নতিতে আরও কী কী করা যায়, তাই নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে।
এ রাজ্য থেকে প্রতি বছর জাপান, আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতে প্রায় হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি হয়। তার শতকরা ৬৫ ভাগই যায় জাপানে। রফতানি ঠিকঠাক চললে রাজ্যের বাজারে বাগদার সরবরাহ কম থাকে। দামও হয় চড়া। কিন্তু এ বার বঙ্গের বাগদা নিতে অস্বীকার করেছে জাপান। তারই ঠেলায় বাঙালির পাতে কার্যত গড়াগড়ি খাচ্ছে চিংড়ি। দামও এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে ২০০-২৫০ টাকায়।
কেন? জাপান জেনেছে, বাগদার খাবারে পচন আটকাতে ‘ইথক্সিকুইন’ নামে একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট (বিষক্রিয়া রোধক) মেশানো হয়েছিল। এই ওষুধের পরিমাণকে মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করছে তারা। অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানি আইনে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সহনসীমা এমনিতেই অনেক কম করা আছে। অর্থাৎ, কতটুকু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলে গণ্য হবে, তার মাত্রা অনেক উঁচুতে বেঁধে রেখেছে জাপান। আমেরিকায় যেখানে মাছের খাবারে ব্যবহৃত অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সহনসীমা প্রতি লিটারে ১ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), জাপানে সেটাই ০.০১ পিপিএম। এই কারণেই সে দেশে বাগদা চিংড়ি ঢুকতে পারেনি।
বর্তমানে খোদ জাপান-বন্দরে আটকে আছে ৩৫টি কনটেনার। জাপানের উদ্দেশে সমুদ্রপথে থমকে আছে ১৫০টি কনটেনার। রাজ্যের মধ্যে আরও ১৫০টি কনটেনার যে কোনও মুহূর্তে পাঠানোর জন্য জলের নীচে রাখা হয়েছে। এর বাইরেও চাষিদের হেফাজতে রয়েছে বিস্তর।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে সম্প্রতি জাপানে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারা সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সহ অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে। নির্দিষ্ট পরিমাণ ইথক্সিকুইন মানবশরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয় বলে তারা দাবি করে। এও বলা হয় যে, আগে থেকে কিছু না জানিয়ে আচমকা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে খুবই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাপান যে সহনসীমা (০.০১ পিপিএম) ঠিক করে চিংড়ি ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে, বাকি বিশ্বে তার কোনও জোড়া নেই বলেও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল জাপান সরকারকে জানিয়েছে। জাপানের মন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেনও। যদিও এ রাজ্যের রফতানিকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, জাপান সরকার চাইলেও সহনসীমা পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া শেষ করতেই বছর খানেক সময় লাগবে।
এ বছরের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার উপায় তবে কী? রাজ্যের রফতানিকারী সংস্থাগুলি এই নিয়ে আলোচনা করতেই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা বলেন, “আমরা কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছি। কিন্তু এর বেশি কিছু আমাদের করার নেই।” |