ভাইয়ের স্ত্রীকে নির্যাতন ও তাঁকে খুনের চক্রান্ত করার অভিযোগে মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতের আইনজীবী তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্ধমান শহর থেকে তাকে ধরা হয়। বুধবার ধৃতের হয়ে কাটোয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের অধিকাংশ আইনজীবী জামিনের সওয়াল করেন। কিন্তু ধৃতের জামিন নাকচ করে তাঁকে ১৪ দিনের জন্য জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন কাটোয়া মহকুমা আদালতের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম উদয় রানা।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৭ অগস্ট পূর্বস্থলী থানার ভাতুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাটোয়া থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁর মেয়ে রাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বুকে ব্যথা নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। গভীর রাতে মেয়ের স্বামী তুহিন হাসপাতালে ঢুকে স্যালাইন-অক্সিজেনের নল খুলে, হাত-পা বেঁধে রেখে মেয়েকে খুন করে। এই খুনের চক্রান্তকারী হিসেবে অভিযোগ করা হয় কাটোয়া শহরের সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দা তুহিনের দাদা তরুণ ও বৌদি মৌসুমীর বিরুদ্ধে। এছাড়া মৌসুমীদেবীর বাবা, মনসাপাড়ার বাসিন্দা লালমোহন ঘোষ ও হাসপাতালের চিকিৎসক জেকে মণ্ডলের বিরুদ্ধেও খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত তুহিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে সে জেল-হাজতে রয়েছে। |
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বর্ধমান জেলা আদালতে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করতে গিয়েছিল তরুণবাবু। বিকেলে আদালত চত্বর থেকে বেরোতেই কাটোয়া ও বর্ধমান থানার পুলিশ যৌথ ভাবে তাকে গ্রেফতার করে। রাতেই তাকে কাটোয়া থানায় নিয়ে আসা হয়। বুবার তাকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাঁর পক্ষে সওয়াল করেন অধিকাংশ আইনজীবী। কাটোয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষের দাবি, “আমাদের এক সদস্যকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই আমরা তাঁর হয়ে বিচারকের কাছে জামিন চেয়েছি।”
মহকুমা আদালতের আইনজীবী অতনু রায় বিচারকের কাছে দাবি করেন, এই ঘটনায় অন্যতম চক্রান্তকারী হিসেবে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক জেকে মণ্ডলের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অথচ ওই চিকিৎসক শহরেই রয়েছেন। প্রাইভেট প্র্যাকটিসও তালিয়ে যাচ্ছেন। অতনুবাবুর দাবি, “আমি বলছি না ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করতে। কিন্তু এক জন আইনজীবীকে গ্রেফতার করাও ঠিক হয়নি। পুলিশ দ্বিচারিতা করছে।” সরকারি আইনজীবী কল্যাণ রায় জামিনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম উদয় রানা ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধৃতকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস বলেন, “যা হবে আইন মেনেই হবে। ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চক্রান্ত ছাড়াও বধূ নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |