|
|
|
|
বিএড প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়ুয়ারা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
গত জুলাই মাস থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনা শুরু করার কথা ছিল উত্তরবঙ্গের ৬ টি বিএড কলেজে। তার মধ্যে ২টি বেসরকারি বি এড কলেজ। এ বছর মে মাসের মাঝামাঝি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘কেন্দ্রীয় বিএড সেল’ গঠন করে ‘কমন এডমিশন ফর্ম’-এর মাধ্যমে বিএড কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরুও করেন। কিন্তু মেধা তালিকা প্রকাশ এবং ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না-হওয়ায় এখনও বিএড কলেজগুলিতে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনা চালুই করতে পারেননি তাঁরা। তাতে বিএড প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে আবেদন করেছেন এমন উৎসাহীরা ছাত্রছাত্রীরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীর কুমার দাস বলেন, ‘‘পদ্ধতিগত নানা সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা বিএড কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে উৎসাহী ছাত্রছাত্রী যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। নিয়ম মেনেই শীঘ্রই মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। কাউন্সেলিং-সহ ভর্তির অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে বিএড কলেজগুলিতে পড়াশোনা শুরু করা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রালাইজড বিএড সেল সূত্রেই জানা গিয়েছে, নানা কারণে এ বছর বিএড কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি নির্দেশে প্রথমে স্কুলের শিক্ষকেরা এ বার বিএড কলেজগুলিতে ভর্তি হতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছিল। সেই মতো ১-১৫ জুনের মধ্যে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়। বিএড পড়তে সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। এর পরে ২৮ জুন উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে নির্দেশ পৌঁছায় শিক্ষকদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে। এই পরিস্থিতিতে মেধা তালিকা প্রকাশ স্থগিত রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ৩ জুলাই শিক্ষকদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাঁদের আবেদন করতে বলা হয়। ২১ জুলাই তাঁদের মেধা তালিকা প্রকাশের কথা জানানো হয়। প্রাথমিক মেধা তালিকা প্রকাশ হলে তাতে ভুলভ্রান্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের তরফে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিএড কলেজগুলিতে আসন বাড়ানোর দাবিও ওঠে। তা ছাড়া গত বছর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ৪ টি সরকারি এবং ৪ টি বেসরকারি কলেজে বিএড পড়াশোর সুযোগ ছিল ছাত্রছাত্রীদের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিকাঠামো না-থাকায় দু’টি বেসরকারি কলেজের অনুমোদন খারিজ করা হয়। তারমধ্যে একটি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে মামলাও করা হয়। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। যদিও ভর্তির প্রক্রিয়ার উপর কোনও স্থগিতাদেশ আদালতের তরফে দেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভেঙে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি, কোর্ট, বিভিন্ন কাউন্সিলের কমিটিগুলি। এখনও আন্ডার গ্রাজুয়েট কাউন্সিলের নতুন কমিটি গঠন হয়নি। সে কারণে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে কর্মসমিতির বৈঠকের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ সব পরিস্থিতির জেরে বিএডের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকটা সময় নষ্ট হয় বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগে ৮ টি বিএড কলেজে আসন সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫০। কিন্তু পরিকাঠামো ঠিক না থাকার জন্য ২ টি বেসরকারি বিএড কলেজের অনুমোদন খারিজ করা হয়। তাতে আসন সংখ্যা প্রায় ২০০ টি কমে যায়।
বর্তমানে জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র ট্রেনিং কলেজ, শিলিগুড়ি বিএড কলেজ, দার্জিলিঙের রামকৃষ্ণ বিটি কলেজ, কোচবিহারে ইউনিভার্সিটি বিটি অ্যান্ড ইভিনিং কলেজ, কোচবিহার বিএড কলেজ, ফাঁসিদেওয়ায় বিদ্যাসাগর কলেজ অব এডুকেশন এই ৬ টি বেসরকারি ওই কলেজে ৫১০ টি আসন রয়েছে। কোচবিহারে রবীন্দ্রনাথ টেগর কলেজ অব এডুকেশন-এ এ বছর থেকে নতুন করে বিএড পড়ার সুযোগ পাবেন ছাত্রছাত্রীরা। তাতে আরও প্রায় ১০০ টি আসন বাড়বে। সেন্ট্রালাইজড বিএড সেলের আহ্বায়ক তথা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কাউন্সিলের সচিব নুপুর দাস জানান, আশা করছি শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত পড়াশোনা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। কিছুটা সময় নষ্ট হওয়ায় বিএডের ছাত্রছাত্রীদের বাড়তি ক্লাস করানো, পরীক্ষার জন্য বাড়তি সময় দেওয়ার যেতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
এবিটিএ’র দার্জিলিং জেলা কমিটির সম্পাদক তমাল চন্দ বলেন, “২০১৪ সাল থেকে হাই স্কুলের শিক্ষকতা করার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিএড বাধ্যতামূলক করতে চলেছে সরকার। যে সব শিক্ষকেরা বিএড প্রশিক্ষিত নন ২০১৫ সালের মধ্যে তাদের বিএড প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। অথচ বিএডের পড়াশোনার এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।” ছাত্রছাত্রীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ বছর বিএডের পড়াশোনা চালু না হওয়ায়। বিএড কলেজগুলিতে ভর্তির আবেদন করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রোনাল্ড দে, প্রসেনজিৎ দাসদের মতো উৎসাহীরা। রোনাল্ড বলেন, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। দক্ষতাহীন কর্মচারী। তাই তাঁরা ২ মাস ধরে বসে থেকে এখনও মেধা তালিকা প্রকাশই করতে পারলেন না। বিএডের জন্য প্রায় ৭ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন। সকলেই চিন্তায় রয়েছি।” |
|
|
|
|
|