ট্রেনের সিটে কাপড়ের উপর শুয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটা মাঝে মধ্যেই কেঁদে উঠছিল। কতই বা বয়েস! সাত-আট মাসের হবে। কামরার যাত্রীরা মাঝেমধ্যেই ওর দিকে তাকাচ্ছিলেন। কিন্তু শিশুটার বাড়ির লোক কোথায়?
প্রশ্নটা মনে আসতে খোঁজ করেও ওর অভিভাবকের সন্ধান পাননি পুরুলিয়া শহরের কসাইমহল্লার বধূ নেহা হাজরা। আর সাত-পাঁচ না ভেবে শিশুটিকে তিনি কোলে তুলে নেন। দুধের শিশুটাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেরি না করে আসানসোল-টাটা প্যাসেজ্ঞার ট্রেন থেকে নেমে পড়েন পরের স্টেশন গড়ধ্রুবেশ্বরে। স্টেশন ম্যানেজারকে সব কথা জানান। তিনি শিশুটিকে আদ্রা স্টেশনের রেল পুলিশের কাছে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। নেহাদেবী একে ভুল ট্রেনে উঠে বেকায়দায় পড়েছিলেন নেহাদেবী। তার উপর আবার শিশুকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ারও দায়িত্ব নিয়েছেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। শেষে স্থানীয় গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ রউফ আনসারি সব কথা জেনে মোটরবাইকে নেহাদেবী ও শিশুটিকে চাপিয়ে আদ্রায় পৌঁছে দেন। আদ্রা রেল পুলিশ শেষ পর্যন্ত অভিভাবকহীন শিশুটিকে বাঁকুড়ার ছাতনার একটি হোমে পাঠান। |
নেহাদেবী জানান, ভাগা যাবেন বলে তিনি পুরুলিয়া থেকে আদ্রায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগার বদলে ভুল করে তিনি ফের পুরুলিয়া যাওয়ার ট্রেনে চড়ে বসেছিলেন। জানলেন যখন, তত ক্ষণে ট্রেন স্টেশন ছাড়িয়ে গিয়েছে। হঠাৎ তাঁর নজরে আসে সিটে পড়ে থাকা শিশুটির দিকে। তাঁর কথায়, “শিশুটি কেঁদে যাচ্ছিল। অথচ কেউ ভোলাচ্ছিল না। ওর বাড়ির লোক কোথায়, খোঁজ করেও পাইনি। শেষে ওকে কোলে তুলে নিই। পাশে একটি ব্যাগে ওর পোশাক, দুধের বোতল ছিল। মায়া হওয়ায় ওকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে মন চায়নি। ভাগা যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে মেয়েটাকে নিরাপদ একটা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবি।”
আদ্রার আইআরপি সরোজ হাজরা বলেন, “এ দিন দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে নেহা হাজরা নামের ওই মহিলা আমাদের কাছে আসেন। সব শুনে শিশুটিকে স্থানীয় মনিপুর গ্রামে চাইল্ড লাইন কমিটির কাছে পাঠানো হয়।” সেখানকার একটি হোমের কর্মকর্তা নবকুমার দাস বলেন, “অত ছোট শিশুকে আমাদের হোমে রাখার মত পরিকাঠামো নেই। তাই শিশুটিকে ছাতনার একটি হোমে পাঠানো হয়।”
শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে হোমে পাঠাতে পেরে তৃপ্ত নেহাদেবী। তিনি বলেন, “ভুল ট্রেনে ওঠায় প্রথমে যে আফশোস ছিল, একটা ভাল কাজ করে এখন মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছে। তবে অভিভাবকরা এ বার শিশুটিকে নিয়ে গেলে মন আনন্দে ভরে যাবে।” |