দুই ঘরে পড়েছিল মা ও স্ত্রীর দেহ। আর শৌচাগারে মিলল ধান ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত দেহ।
বর্ধমানের মেমারিতে মা মাধুরী হুই (৬০) ও স্ত্রী সাথীকে (২২) খুন করে কার্তিক হুই (২৭) নামে ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ব্যবসায় লোকসানের জেরে স্ত্রী ও মাকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হচ্ছেন বলে সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন কার্তিকবাবু। তিনটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা ও একটি পৃথক খুনের মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মেমারির খাড়গ্রাম হুইপাড়ার বাসিন্দা এই তিন জন। স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকালে কার্তিকবাবুদের বাড়িতে কারও কোনও সাড়াশব্দ মিলছে না দেখে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। একতলা বাড়ির সদর দরজার সামনে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সেখানে একটি ডায়েরির পাতা সাঁটানো রয়েছে। তাতে লাল কালিতে লেখা, ‘একা ঢুকবে না/সবাইকে ঢেকে (পুলিশের মতে, ‘ডেকে’ লিখতে চাওয়া হয়েছে) বাড়িতে ঢোকো/ডাইরিটা দেখো/কার্ত্তিক’। |
বাড়ির বাইরে থেকে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন, দু’টি ঘরে মাধুরীদেবী ও সাথীদেবীর দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানায়, বাড়িতে দু’টি ঘর। একটি ঘরে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো মাধুরীদেবীর দেহ পড়েছিল বিছানায়। দড়ির এক প্রান্ত আটকানো ছিল খাটের সঙ্গে। অন্য ঘরের মেঝেতে পড়েছিল সাথীদেবীর দেহ। তাঁকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। কার্তিকবাবুর বোন মিঠু দত্ত বলেন, “দু’বছর আগে দাদার বিয়ে হয়। নিরীহ স্বভাবের ছেলে ছিল। ও যে এ ভাবে মা আর বৌদিকে খুন করতে পারে, এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।”
এলাকায় ধান ব্যবসায়ী হিসাবেই পরিচিতি ছিল কার্তিকবাবুর। গ্রামবাসীরা জানান, ফি বছর চাষিদের কাছে ধান কিনে চালকলে বিক্রি করতেন তিনি। এ বারও করেছিলেন। কার্তিকবাবুর আত্মীয় তথা স্থানীয় বাসিন্দা সরোজ হুইয়ের দাবি, “কার্তিকের নিজের পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানেও ধান চাষ করেছিল। নিজের ধান ও অন্য চাষিদের কাছ থেকে কেনা ধান চালকলে বিক্রি করে প্রত্যাশিত দাম পায়নি। বাজারে দেনা হয়ে গিয়েছিল। তা শোধ করা নিয়ে ও দুশ্চিন্তায় থাকত।” গ্রামের আর এক বাসিন্দা প্রতীক সামন্তও বলেন, “দেনার দায়ে কার্তিক যে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, তা আমরা জানতাম।” জেলা ধান ব্যবসায়ী সমিতির নেতা প্রশান্ত লাহার বক্তব্য, “কার্তিকবাবু আমাদের সমিতির সদস্য নন। তবু আমরা ঘটনাটির খোঁজ নিতে মেমারি গিয়েছিলাম। সারা রাজ্যেই ধান ব্যবসায়ীদের অবস্থা বেশ খারাপ। বড় গুদাম করে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করে আরও বিপাকে পড়েছিলেন কার্তিকবাবু। কারণ, এ বার ধানের তেমন দাম মেলেনি।” যদিও কার্তিকবাবুর এমন কোনও গুদামের কথা তাঁদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন হুইপাড়ার বাসিন্দারা। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। |