আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহারে দলের আসন সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঘর গোছাতে শুরু করে দিল কংগ্রেস। ওই পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার দলের জেলা দফতরে সবকটি ব্লকের সভাপতি ও জেলা কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন কোচবিহারের কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বুথ ভিত্তিক সংগঠন চাঙ্গা করা, একক ভাবে দলের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ব্লক সভাপতিদের এখন থেকে তৈরি থাকা। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জেলা স্তরে তো বটেই, মহকুমা স্তরেও বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়ার ব্যাপারেও ব্লক নেতাদের কাজে নেমে পড়বার বিষয়গুলি রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়েও তাঁদের সরব হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও বৈঠকের আলোচনায় উঠেছিল। সব মিলিয়ে পুজোর আগে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে কোচবিহার শহরে নজরকাড়া র্যালি, সভা আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলায় কংগ্রেস নেতারা পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করে ময়দানে নেমে পড়বার বার্তা দিতে চাইছেন বলেও বৈঠকে উপস্থিত নেতৃত্বকে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডাকা হয়েছে। তা ছাড়া সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন রয়েছে। জেলায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ মুক্ত পরিবেশে ওই নির্বাচন করার বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের টনক নড়াতে চাইছি। কারণ, সেটা না হলে ওই নির্বাচন আখেরে প্রহসনে পরিণত হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। একই সঙ্গে জেলায় একক ভাবে লড়াইয়ের জন্য কংগ্রেস তৈরি থাকছে বলে দলীয় কর্মীদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন কোচবিহারের কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “কোচবিহারের কিছু ব্লকে প্রচন্ড সন্ত্রাস চলছে। তুফানগঞ্জের এনএনএম হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মারধর করা হয়। হাড়িভাঙাতেও একই ভাবে তৃণমূল আমাদের অঞ্চল সভাপতিকে মারধর করায় কেউ মননোয়ন জমা দিতে পারেননি। পুলিশের সামনে ওই সব ঘটনা হলেও তাঁরা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোট হলে সেটা প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু হবে না। আমরা জোটের বিরোধী নই। কিন্তু সবরকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকছি।” দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোচবিহার জেলায় জেলা পরিষদের ১টি, পঞ্চায়েত সমিতির ২৭ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৬০ টি আসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এবারে ওই আসন সংখ্যা বাড়াতে আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করেছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “গত পঞ্চায়েতে বিভিন্ন জায়গায় জোটের স্বার্থে আমরা আশানুরূপ সংখ্যায় প্রার্থী দিতে পারিনি। এবার তাই কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। একশো শতাংশ আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করে রাখার ব্যাপারে ব্লক সভাপতিদের বলা হয়েছে। এতে আর যাই হোক শেষ মুহূর্তে জোট না হলে আমাদের কোনও আসন ওয়াকওভার দিতে হবে না।” দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের সিতাই বিধানসভা কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে সিতাই ছাড়াও দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও কোচবিহার সদরে বাড়তি জোর দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। তুফানগঞ্জ ও মাথাভাঙা নিয়ে চেষ্টা করা হলেও তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে দলের নেতাদের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। দলের এক নেতা জানান, সিতাই বিধানসভা, কোচবিহার পুরসভা, হলদিবাড়ি পুরসভা দলের দখলে থাকার কিছু প্রভাব লাগোয়া ও আওতাধীন গ্রাম পঞ্চায়েতে পড়বে এমন সম্ভবনা বেশি। তাই তাঁরা ওই তিন মহকুমার ওপরে বাড়তি জোর দিচ্ছেন। কংগ্রেস সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বর কোচবিহারে দলের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সাংসদ দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরী, বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় সহ বেশ কয়েকজনের। ওই সভায় রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়া নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করা হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
|
একনজরে গত ভোটে প্রাপ্ত আসন সংখ্যা (প্রতীক, সমর্থিত নির্দল মিলিয়ে) |
• কোচবিহার জেলা পরিষদ ১
• পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য ২৭
• গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ১৬০
• কংগ্রেসের দখলে সিতাই বিধানসভা, কোচবিহার ও হলদিবাড়ী পুরসভার চেয়ারম্যান পদ। |
|