বালুরঘাটে কিশোরী খুনে ধৃত হোটেলকর্মী যুবক
ক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ লাইনের ভিতর থেকে যে কিশোরীর দেহ পাওয়া গিয়েছিল, তাকে খুনের আগে ধর্ষণ করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার রাতে পুলিশ লাইন লাগোয়া হোটেলের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হল। পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক সঞ্জয় পাহান ওই কিশোরীকে মঙ্গলবার সকালে ধর্ষণের পরে শ্বাসরোধ করে খুনের কথা কবুল করেছেন। কিন্তু রূপা সোরেন নামে ওই কিশোরীর মা রেণুকা সোরেন পুলিশের দাবি মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মেয়ে না-ফেরায় প্রথমে থানায় যাই। পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। তখন পুলিশ লাইনের মধ্যে আমবাগানে খোঁজাখুঁজি করে পাতা কুড়ানোর বস্তাটি পাই। সেটি বাড়িতে নিয়ে যাই। যেখানে বস্তাটি পেয়েছিলাম, পরদিন, বুধবার দুপুরে সেখানেই মেয়ের দেহ মিলেছে। তাই পুলিশের দাবি মানতে পারছি না।”
রূপা যে এলাকার বাসিন্দা ছিল, সেই কালাচাঁদ কলোনির বাসিন্দারাও পুলিশ কিছু আড়াল করতে চাইছে বলে সন্দেহ করছেন। বৃহস্পতিবারও এলাকার বাসিন্দারা পুলিশ লাইনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ, অবরোধ দেখাতে শুরু করেন। জনতা পুলিশ লাইনের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশ লাঠি চালালে ৫ মহিলা-সহ অন্তত ৩০ জন জখম হন বলে বাসিন্দাদের দাবি। পুলিশ ৬ মহিলা সহ ৮ জন অবরোধকারীকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি, ছাত্র ব্লকের পক্ষ থেকে জেলায় ছাত্র ধর্মঘট ডাকায় স্কুল-কলেজ অচল হয়ে যায়।
অভিযুক্ত সঞ্জয় পাহান। ছবি: অমিত মোহান্ত
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় বলেন, “যা ঘটেছে তা ভয়ঙ্কর। পুলিশ লাইনের মধ্যে দেহটি মঙ্গলবার সকাল থেকে পড়ে থাকল আর তা বুধবার দেখা গেল! এটা বিশ্বাস করা মুশকিল। কোথাও, কিছু একটা আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে বলে অনেকেরই সন্দেহ। আমরা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছি।” কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে ওই দাবি জানানো হয়।
দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত যুবক সঞ্জয় পাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত যুবক পুলিশ লাইনের পাশে একটি হোটেলে কাজ করত। সে অপরাধ স্বীকার করেছে।” কিন্তু, ধৃতের জবানবন্দির সত্যতা নিয়ে রূপার বাড়ির লোকজন যে প্রশ্ন তুলেছেন সেই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জবানবন্দিতে অসঙ্গতির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”
রূপার বাড়ির লোকজনেরা জানান, রোজই স্কুলে যাওয়ার আগে মেয়েটি পুলিশ লাইনের আমবাগানে শুকনো পাতা কুড়োতে যেত। মঙ্গলবার সকালেও গিয়েছিল। রোজ ৯টার মধ্যে বাড়ি ফিরলেও সেদিন সে ফেরেনি। দুপুরে বাড়ির লোকজন তাকে খুঁজতে বার হন। থানায় জানালেও প্রথমে অভিযোগ নেওয়া হয়নি। বাড়ির লোকজন আমবাগানে গিয়ে বস্তাটি পান। পর দিন ওই জায়গায় দেহটি মেলে। এর পরেই বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গভীর রাত পর্যন্ত অবরোধ, বিক্ষোভ চলে। ওই রাতেই পুলিশ লাইন লাগোয়া হোটেল থেকে সঞ্জয়কে ধরে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ধৃত যুবক দাবি করেছে রূপার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। পুলিশ দাবি করেছে, ওই দিন সহবাসের পরে রূপা ৫০০ টাকা দাবি করলে সঞ্জয় তা দিতে চায়নি। তখন রূপা চেঁচামেচি করে সকলকে জানিয়ে দেবে বললে সঞ্জয় রূপার গলা টিপে খুনের পরে মুখ ইট দিয়ে থেঁতলে চলে যায় বলেও পুলিশের দাবি। এলাকাবাসীদের অনেকেরই প্রশ্ন, একটি মেয়েকে গলা টিপে খুনের পরে দেহ ফেলে রেখে যাওয়া হল পুলিশ লাইনের মধ্যে। অথচ বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজির সময়ে ঘটনাস্থলে দেহটি ছিল না কেন? সঞ্জয়ের দাবি যদি ঠিক হয়ে থাকে, তা হলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত দেহটি কোথায় ছিল?
বাসিন্দাদের ক্ষোভ দানা বাঁধার আর একটি কারণ হল, দেহ মেলার পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জ্যাকলিন দোর্জি প্রথমে বাইরে খুনের পরে কেউ দেহটি ভেতরে ফেলে গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এলাকার এক হোটেল কর্মী যুবকের সঙ্গে ছাত্রীটির মেলামেশা ছিল। ঘটনার দিন মঙ্গলবার সকালে ছাত্রীটি ওই যুবককে পুলিশ লাইনের ভিতরে আমবাগানে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে সরু গলির মধ্যে ঘটনাটি ঘটে।” তা হলে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন বাইরে খুন করে দেহটি ভেতরে ফেলা হয়েছিল বলে বলা হয়েছিল? ওই ঘটনায় সত্যিই কী সঞ্জয় একাই যুক্ত? এমন নানা প্রশ্নে রূপা খুনের রহস্য কাটেনি। ঘটনাচক্রে এ দিন বদলির নির্দেশ পেয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ। তবে তাঁর দাবি, “পারিবারিক কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণবঙ্গে বদলি চাইছিলাম। এই ঘটনার সঙ্গে বদলির কোনও সম্পর্ক নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.