ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হুগলিতে। অথচ, জেলার দুই প্রান্তের দুই পুরসভা মশা মারার ‘কিট’ (কামান এবং তেল ছড়ানোর যন্ত্র) প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় গুদামে ফেলে রেখেছে। নাম-কা-ওয়াস্তে কয়েকটি এলাকায় মশা মারার তেল ছেটানো হচ্ছে।
উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৯ জনের রক্তের ‘এনএস-১’ পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ হয়েছে। তাঁদের রক্তের নমুনা ‘এমসি-অ্যালাইজা’ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং আরামবাগ হাসপাতালে যথাক্রমে ৩ জন এবং ৫ জন রোগীর রক্তের ‘এনএস-১’ পরীক্ষার রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ হয়েছে। চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালেও এমন দু’জন রোগী রয়েছেন।
অথচ, উত্তরপাড়া পুরসভা এবং আরামবাগ পুরসভার এখনও মশা মারার ‘কিট’ ব্যবহার শুরুই করেনি। আরামবাগ পুরসভার কর্তাদের দাবি, বর্ষায় ওই কিট ব্যবহার করে লাভ হবে না। আর উত্তরপাড়া পুরসভার কর্তাদের দাবি, বর্ষায় কামান দাগলে মশা মরে না। উল্টে উড়ে গিয়ে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাই তা ব্যবহার করে কী লাভ! |
পুর এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘কুযুক্তিতে’ কামান দাগা চালু করা হল না। নাম-কা-ওয়াস্তে কয়েকটি এলাকায় মশা নিরোধক তেল ছেটানো শুরু হলেও দু’দিনের বৃষ্টিতে অপরিস্কার নর্দমা উপছে সেই তেল বেরিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের অভিমত, এই পরিস্থিতিতে কামানের ধোঁয়াই মশার হাত থেকে নিস্তার দিতে পারত। কিন্তু তা হল না।
আরামবাগ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী আসছেন জ্বরের উপসর্গ নিয়ে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ২ লক্ষ টাকারও বেশি দামের মশা তাড়ানোর সরঞ্জাম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন তা ব্যবহার করা হচ্ছে না? পুরপ্রধান গোপাল কচ বলেন, “বর্ষায় তেল আর কামান দাগলে পুরসভার অর্থই জলে যাবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না।” অবশ্য তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বর্ষা শেষ হলে মশা নিয়ন্ত্রণে তেল ছড়ানো হবে। কামানও দাগা হবে বিভিন্ন এলাকায়।
বৃহস্পতিবার দিনভর জেলার তিনটি মহকুমা হাসপাতাল, একটি স্টেট জেনারেল, কয়েকটি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং সদর হাসপাতালে চক্কর কেটে দেখা গিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরের অনেক জায়গাই এখন মশার ‘আঁতুরঘর’ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জমে রয়েছে জল। চিকিৎসকদের ডিসপেনসারি, নার্সিংহোমে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় লেগে গিয়েছে। |
উত্তরপাড়া পুরসভার কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে তাঁরা সক্রিয়। পুরসভার মেয়র-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদব বলেন, “সেনেটারি ইনস্পেক্টরদের নিয়ে আমরা সকাল-সকালই বেরিয়ে পড়ছি পুরসভার প্রতিটি এলাকায়। ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী করবেন আর কী করবেন না, তা নিয়ে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে। মাইকেও প্রচার করা হবে।” |