সময়সীমা পার হওয়ার পরেও বরাত পাওয়া যে সমস্ত সংস্থা বা ব্যক্তি এখনও পুরসভাকে টাকা দেননি তাঁদের একাংশ পুর কর্মীদের নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তা জানার পরেও পুলিশে অভিযোগ জানানো তো দূরের কথা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুর কর্তৃপক্ষ গরিমসি করায় তা নিয়ে কর্মী মহলেও অসন্তোষ ছড়িয়েছে। অগ্রিম টাকা না-নিয়ে পার্কিংয়ের বরাত দেওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে পুরসভার একাংশ তৎপর বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে পার্কিংয়ের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। টাকা আদায়ে পুর কর্তৃপক্ষ উদাসীন অভিযোগ তুলে তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধী বামেরা। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “উদাসীনতার ব্যাপার নেই। অভিযুক্তরা যাতে রেহাই না পান সে জন্য সমস্ত কিছু দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়েছে সে সময় পুর কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন কাজল কান্তি সাহা। তাঁর এবং বর্তমান পুর কমিশনার প্রভুদত্ত ডেভিড প্রধানের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে কাজলবাবু পুরসভার সচিব পদে রয়েছেন। সে সময় সেবক মোড় থেকে পানিট্যাঙ্কি মোড় পর্যন্ত ৭ নম্বর জোনটি পার্কিংয়ের বরাত পেয়েছিলেন রাকেশ পাল নামে এক ব্যক্তি। পরে ৪ নম্বর জোনের পার্কিংয়ের বরাত পান তিনি। প্রায় ১১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা তাঁর বকেয়া রয়েছে। সম্প্রতি তিনি পুরসভায় পার্কিংয়ের নথিপত্র দেখার কাজে যুক্ত এক পুরকর্মীকে ফোনে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এমনকী বকেয়া ফেলে রাখায় এ বছর তাঁকে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তার পরেও ৭ নম্বরে জোনে তাঁর লোক পুরনো স্লিপ দিয়ে পার্কিং ফি আদায় করছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ যায়। পুরসভার তরফে সে সব ‘স্লিপ’ ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্তও করা হয়। এর পরই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে কাজলবাবুকে জানান মেয়র, ডেপুটি মেয়ররা। সে কথা তিনি অভিযুক্ত রাকেশবাবুকে ফোন করে জানান। সে সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা-সহ মেয়র পারিষদদের কয়েকজন। পুরসভার অন্দরের কথা এ ভাবে বাইরে জানানোর জন্য কাজলবাবুকে ভর্ৎসনাও করেন ডেপুটি মেয়র। দ্রুত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলেন। অন্তত ৪ দিন আগে এ কথা জানার পরও পুলিশে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। ডেপুটি মেয়র বলেন, “কেন এখনও পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়নি তা খোঁজ নেব।” কাজলবাবু অবশ্য বলেন, “বকেয়া আদায়ের জন্যই ফোন করতে হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে যা বলার পুর কমিশনার, মেয়ররাই বলবেন।” অভিযুক্ত রাকেশবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কাউকে পুরনো স্লিপ দিয়ে পার্কিংয়ের ফি আদায়ও করতে বলিনি। যারা ওই কাজ করেন তাদের কাছে পুরনো স্লিপ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” পুরসভার টাকা তিনি মিটিয়েও দিয়েছেন বলে দাবি করেন। যদিও তার সপক্ষে কোনও নথি দেখাতে পারেননি। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলর পুর কমিশনারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মেয়র পারিষদদেরই একাংশের অভিযোগ, বলে দিলেও পুর কমিশনার নিজে কোনও কাজই করতে চাইছেন না। জবাবে পুর কমিশনার বলেন, “পুর বোর্ড রয়েছে। মেয়র, তাঁর পারিষদরা রয়েছেন। তাদের জানিয়ে সব কাজ করাই নিয়ম। সে ভাবেই কাজ করছি।” বর্তমানে শিলিগুড়ির জংশন স্টেশন লাগোয়া হিলকার্ট রোডে পার্কিংয়ের বরাত পান সন্তোষ প্রসাদ নামে এক ব্যক্তি। বাইক, অটো, ছোট গাড়ি থেকে পার্কিং ফি আদায়ের কথা থাকলেও অবৈধ ভাবে তিনি বাস দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সন্তোষবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিয়ম ভেঙে অগ্রিম টাকা না নিয়ে ঘনিষ্ঠ লোকদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মেয়রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা থেকে পুর আধিকারিকদের একাংশ অনিয়মে যুক্ত রয়েছেন। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হোক।” |