‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে গোটা পরিবারকে কার্যত একঘরে করেছে গ্রাম। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নলকূপ থেকে জল নেওয়া, পুকুরে স্নান। জুটেছে মারধর। এখানেই শেষ নয়, কলেজ যাওয়া-আসার পথে মেয়েকে নিয়মিত গালিগালাজ শুনতে হচ্ছে। তিন বছর ধরে থানা-পুলিশ, পঞ্চায়েত ঘুরেও প্রতিকার মেলেনি। বৃহস্পতিবার স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসে গিয়ে এমনই অভিযোগ জানালেন নটবর সোরেন।
বিষ্ণুপুর থানার ভড়া পঞ্চায়েতের শালুকা গ্রামের বাসিন্দা নটবরবাবু নিজের সামান্য জমিতে চাষবাস করেন। এ ছাড়া খেতমজুরের কাজও করেন তিনি। এ দিন মেয়ে পূর্ণিমার সঙ্গে ব্লক অফিসে গিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন নটবর ও তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা সোরেন। নটবরবাবুর দাবি, “বছর তিনেক আগে আমাদের প্রতিবেশী সুমিত্রা হাঁসদার অসুখ করে। তখন তিনি আমার স্ত্রীকে ‘ডাইনি’ অপবাদ দেন। জোর করে এক জানগুরুর কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেই জানগুরু এ কথা মানেননি। তবু ওরা আমার কাছে ৭০০ টাকা জরিমানা চায়। ভয়ে তখন তা দিয়েছিলাম। সেই থেকে প্রথমে টাকা চাওয়া, পরে নানা অছিলায় মারধর ও শেষে আমাদের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।” বিষয়টি ভড়া পঞ্চায়েত, বিষ্ণুপুর থানা, এমনকী এসডিপিও (বিষ্ণুপুর)-কে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। |
সোনামুখী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী পূর্ণিমার সঙ্গে এ দিন নটবরবাবু ও সুমিত্রাদেবী যখন ব্লক অফিসে পৌঁছন, বিডিও ছিলেন না। যুগ্ম বিডিও বৈদ্যনাথ হেমব্রমের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে সুমিত্রাদেবীর অভিযোগ, “খাওয়ার জল নেওয়া বন্ধ করায় আমরা ঘরে টিউবওয়েল বসিয়েছি। এখন তা নিয়েও আপত্তি তুলছে গ্রামের লোকজন। ডাইনি বলে গালাগাল দিয়ে গায়ে পড়ে গণ্ডগোল বাধাচ্ছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। দয়া করে একটু দেখুন।” বাংলা অনার্সের ছাত্রী পূর্ণিমার দাবি, “গ্রামে গত তিন বছর আমাদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না। আমার দু’ভাই, বাবা, মা ও আমাকে অকারণে গালিগালাজ করে। তাই বিডিও-র কাছে আসতে বাধ্য হলাম।” তাঁর অভিযোগ, “গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর কাটারি নিয়ে গ্রামেরই কয়েক জন বাবার উপরে চড়াও হয়। ১৯ দিন বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় বাবাকে। তার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” এ দিন যুগ্ম বিডিও-র কাছে ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন পূর্ণিমা।
যুগ্ম বিডিও বলেন, “চার পাশে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। তার পরেও একটি গ্রামে তিন বছর ধরে কোনও পরিবার এই অপবাদের স্বীকার হচ্ছে শুনে অবাক হচ্ছি। পুলিশ কেন কিছু করেনি, পঞ্চায়েতই বা আমাদের কিছু কেন জানায়নি, বুঝতে পারছি না। বিডিও বাঁকুড়ায় একটি বৈঠকে গিয়েছেন। তিনি ফিরলে এই অভিযোগের কথা জানাব। প্রধানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।”
ভড়া পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যাম সোরেনের অবশ্য দাবি, “এটা গ্রামীণ বিবাদের ঘটনা। আগেও দু’পক্ষকে নিয়ে আমরা মেটানোর চেষ্টা করেছি। ফের দু’পক্ষকে নিয়ে বসা হবে।” এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষের বক্তব্য, “অনেক আগের ঘটনা। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |