বাঁকুড়ায় মৃত ২
বারণ উড়িয়ে কজওয়েতে, জলের তোড়ে ভাসল বাস
চালকের ভুলের মাসুল গুনলেন দুই বাসযাত্রী। নিজেদের প্রাণ হারিয়ে।
কংক্রিটের কজওয়ের উপর নদীর খরস্রোত দেখে যাত্রীরা চালককে বারবার বারণ করেছিলেন, বাস না নামাতে। চালক পাত্তা দেননি। বিপদ আঁচ করে কয়েক জন আগেই নেমে পড়েন। অভিযোগ, চালক বাসের গতি আরও বাড়িয়ে দেন। যাত্রিবাহী বাস কজওয়ে ছুঁতেই স্রোতের ধাক্কায় টাল খেয়ে নদীতে ভেসে যায়। প্রাণ বাঁচাতে কয়েক জন ঝাঁপ দেন নদীতে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁকুড়ার বারিকুল থানার অমৃতপাল গ্রামের কাছে ভৈরববাঁকি নদীর কজওয়ের এই দুর্ঘটনায় রাত পর্যন্ত দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতেরা হলেন বারিকুলের ফুলকুসমার বাসিন্দা সোমনাথ দত্ত (৩২) এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুর থানার কামারবান্ধি গ্রামের জিৎ গড়াই (১২)। কজওয়ে থেকে কয়েকশো মিটার দূরে পাথরের খাঁজে বাসটি আটকে যাওয়ায় অনেকেই রক্ষা পান। স্থানীয় মানুষ জলমগ্ন বাসের ভিতর থেকে অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করেন। অনেকে সাঁতরে নদীর পাড়ে ওঠেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, ৩৬ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২১ জনের স্থানীয় ফুলকুসমা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। দুই মহিলার চোট থাকায় তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে। এ দিন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ৪-৫ জন নিখোঁজ। স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিজের জীবনকে অক্ষুণ্ণ, নিজেকে নিরাপদ রেখে মানুষের জন্য এটা করাই যেতে পারে। আমি রেলের দায়িত্বে থাকার সময়েও এ রকম অনেক দেখেছি। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বাইরে থেকে লোক গিয়ে উদ্ধার করতে অনেক সময় লেগে যায়। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা ঝাঁপালে সময় কম লাগে, অনেকে বাঁচতে পারে। ওই ছেলেমেয়েদের সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করব।”
দুঃসাহসের মাসুল: বাঁকুড়ায় রাইপুরে বৃহস্পতিবার উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি।
বিডিও (রাইপুর ব্লক) কিংশুক মাইতি বলেন, “দু’জনের দেহ মিলেছে। কয়েক জন জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন বলে স্থানীয় ভাবে শুনেছি। ওই নদীর দু’পাড়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন। তিনি বলেন, “ওই বাসটির চালক, বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা অনিল নন্দীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, কজওয়ের দু’পাশেই জল বাড়ায় ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড ছিল। তা উপেক্ষা করেই চালক কজওয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। ওই বাসেই থাকা ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসের এক কর্মী নিখোঁজ বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে এ দিন সকাল থেকেই ভৈরববাঁকি নদী ফুলে উঠে কজওয়ে ছাপিয়ে যায়। দুপুরে কজওয়ের উপরে ফুট চারেক উচ্চতায় জল বইছিল। সওয়া ১টা নাগাদ কজওয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করে ঝাড়গ্রাম থেকে বর্ধমানগামী বেসরকারি বাসটি। আশপাশের ফুলকুসমা, অমৃতপাল প্রভৃতি গ্রাম থেকে কয়েকশো বাসিন্দা উদ্ধার কাজে হাত লাগান। বারিকুল ও রাইপুর থানার পুলিশও আসে।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, বাসের ভিতরে প্রায় ৫০ জন ও ছাদে আরও কয়েক জন যাত্রী ছিলেন। সারেঙ্গার সিদি গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডলের কথায়, “কজওয়ের উপর স্রোতের বেগ দেখে আমরা কয়েক জন বাস থামিয়ে নেমে যাই। অনেকেই চালককে সেতু পার হতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু চালক স্রোত কাটানোর জন্য গতি বাড়িয়ে কজওয়েতে নেমে পড়ে। চোখের নিমেষে বাসটা কজওয়ে থেকে নদীতে ভেসে গেল। ওই অবস্থায় কয়েক জন বাস থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন।” ফুলকুসমা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি বাসযাত্রী সারদা কদমা, মালতি আহির বলেন, “ভিতরে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি বাসটা শূন্যে লাফিয়ে উঠল। তার পরেই বাসের ভিতরে জল ঢুকতে শুরু করে। লোকজন আমাদের গায়ে উপরে আছড়ে পড়েছিল। এর পরেই জ্ঞান হারাই।”
এ দিন ঘটনাস্থলে দিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেও নদীর দু’পাড়ে উপচানো ভিড়। ডুবুরি নামিয়ে কজওয়ের পাশে তল্লাশি চালছে। উদ্ধারকারীদের মধ্যে ফুলকুসমার বাসিন্দা রাজু খান, পীযূষ মণ্ডল, কালী হেমব্রম, অজয় দালালরা বলেন, “বাসের ভিতরে আটকে পড়া যাত্রীরা চিৎকার করছিলেন। বাস থেকে বেরিয়ে আসা কয়েক জন সাঁতরে পাড়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। আমরা কোমরে দড়ি বেঁধে বাসের কাছে পৌঁছে জানলা ভেঙে একে একে বাকি যাত্রীদের উদ্ধার করি। ভিতরে তখন বেশ কয়েক ফুট জল ঢুকে গিয়েছে।” বিকেলে ক্রেন এনে বাসটি তোলা হয়। মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “উদ্ধার করা যাত্রীদের প্রশাসন থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।”
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাস্থল থেকে এক কিমি দূরে সোমনাথের দেহ মেলে। ৮ কিমি দূরে একপাল গ্রামের কাছে জিতের দেহ উদ্ধার হয়। বাসযাত্রীরা মূলত শিলদা, বিনপুর, রাইপুর, বারিকুল ও খাতড়ার বাসিন্দা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.