|
|
|
|
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন, চাষে সুবিধা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল দুই মেদিনীপুরের জনজীবন।
পূর্বে প্রায় ২৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কিছু এলাকা জলমগ্নও হয়েছে। পশ্চিমে তিনশোরও বেশি বাড়ি ভেঙেছে। তবে, প্রবল বৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকায় আমন ধানের জমি ডুবে গেলেও আখেরে চাষের উপকারই হবে বলে মত কৃষি দফতরের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিকর্তা নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এই বৃষ্টির ফলে জেলায় আমন ও আউস ধানের ক্ষেত্রে সেচের সমস্যা মিটবে। যে অল্প পরিমাণ জমিতে আমন চাষ বাকি রয়েছে সেখানে রোয়ার সুযোগ হল। সামগ্রিক ভাবে ধান চাষের সুবিধা হল।”
নিম্নচাপের জেরে গত সোমবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি চলছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। পূর্বে মঙ্গলবার ১৭ মিলিমিটার, বুধবার ১৭৩ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ তিন দিনে মোট ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। পটাশপুর-১ ব্লকের
|
|
জল জমেছে এগরার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে । ছবি তুলেছেন কৌশিক মিশ্র। |
গোকুলপুর, গোপালপুর, নৈপুর, অমর্ষি-২ ও চিন্তিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের নিচু কৃষি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাগুলি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু কাঁচা বাড়িও। অমর্ষি-২ পঞ্চায়েত প্রধান তাপস মাজি জানান, এই পঞ্চায়েতের বাটিটাকি মৌজাটি কেলেঘাই নদীর গর্ভে অবস্থিত। অতিবৃষ্টির কারণে এলাকার পাঁচটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্যদের স্থানীয় শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গোকুলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান রতিকান্ত বেরা জানান, কানাইডাঙর ও কনকপুরের কাছে পটাশপুর-বালিচক সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিকই আছে। গোপালপুর পঞ্চায়েতের উত্তর সেলমাবাদ গ্রামে কেলেঘাই নদীর বাঁধে দু’জায়গায় সামান্য ধস নেমেছে। বিডিও অমিতেন্দু পাল জানান, মাটি ঢুকিয়ে বাঁধ মেরামতির জন্য প্রচুর বস্তা পাঠানো হয়েছে। গোপালপুর পঞ্চায়েতে রাখা হয়েছে একটি স্পিড বোট ও উদ্ধারকারী দলকে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে এক বা একাধিক নৌকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এলাকায় ত্রিপল বিলি করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক থেকে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টানা বর্ষণে কাঁথি মহকুমার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও কয়েকশো মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। খেজুরি পঞ্চায়েতের ধোবাঘাটা বামুনচকে সমুদ্রবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে রয়েছে খেজুরি-২, রামনগর-১ এবং ২, কাঁথি-১ ও দেশপ্রাণ ব্লকের বেশ কিছু এলাকা। রামনগর-২ ব্লকের মৈতনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭টি পরিবার ও কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের চালতি পঞ্চায়েতে ১০টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। রামনগর-২ ব্লকের উন্নয়ন আধিকারিক সুকান্ত সাহা বলেন, “ব্লকের বাদলপুর, মৈতনা এবং কালিন্দী এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১২৬টি মাটির বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।” |
|
জল বেড়েছে কংসাবতীর। —নিজস্ব চিত্র |
দুর্গতদের মধ্যে ১০ কুইন্টাল চাল ও ৩৫০টি ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান বিডিও রানা বিশ্বাস। দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ জানা জানান, চালতি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজিবসান, সরস্বতীপুর, পুরুষোত্তমপুর ও বাঘাঘোল এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট ও মাজিলাপুট গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়া ছাড়াও বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার দিঘায় প্রবল বর্ষণে সেচ দফতরের বাংলোর পাঁচিল ভেঙে খেজুরি-২ ব্লকের নিজকসবা ও খেজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপকূলবর্তী পাচুড়িয়া, কাদিরাবাদচর, ওয়াসিলচক, অলিচক-সহ বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙনমারিতে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে মঙ্গলবার দ্রৌপদী দাস নামে এক মহিলা-সহ ৪ জন আহত হন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেও জল জমেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, টানা বৃষ্টির জেরে ২৯টি ব্লকের মধ্যে মূলত ৮টি ব্লকের কিছু এলাকাতেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ব্লকগুলি হল মেদিনীপুর (সদর), কেশপুর, গড়বেতা- ১, ২ ও ৩, দাসপুর-১, চন্দ্রকোনা-১ ও ২। ৮ টি পুরসভার মধ্যে ক্ষীরপাই পুরসভার কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩২১টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলি সবই কাঁচা বাড়ি। প্রায় ২ হাজার ৮৯ টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। |
|
|
|
|
|