কয়েক দিন আগে বেঙ্গালুরুতে এক ডিনার পার্টিতে আমি যুবরাজ সিংহকে দেখলাম। বেশ খানিকটা রোগা, ছিপছিপে হয়ে গিয়েছে। মাথায় চুলও হয়েছে অনেক। সব মিলিয়ে ওকে আদৌ ক্যানসার রোগীর মতো দেখাচ্ছিল না। এই যুবরাজকেই আগামী শনিবার আমরা আবার ক্রিকেট মাঠে দেখব।
ক্রিকেটীয় কারণে বাদ পড়ে কামব্যাক আমিও করেছি। কিন্তু এটা তো শুধু ক্রিকেটীয় কামব্যাক নয়। এ তো জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে কামব্যাক। শনিবার তাই শুধু বাইশ গজের নয়, জীবনের পরীক্ষাতেও নামবে যুবরাজ।
সেই পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা আছে ওর? আমি মনেপ্রাণে চাই ও সফল হোক। কিন্তু নিখাদ ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে, ব্যাপারটা মোটেও সোজা নয়। একে তো যুবরাজ ক্যানসারের মতো রোগ সারিয়ে মাঠে ফিরছে। তার উপর প্রায় ৮-১০ মাস প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে। আমরা সচিনকে দেখেছি, ম্যাচ প্র্যাক্টিস না থাকায় কী অবস্থা। তাও সচিন মাত্র কয়েক মাস ম্যাচ খেলেনি। |
আমি শনিবার টিভি-র সামনে বসব, যুবরাজের রিফ্লেক্স কেমন থাকে দেখতে। পায়ের মুভমেন্ট কী রকম হচ্ছে তাও দেখতে চাই। ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে দেখেছি, ও ফুলটসও ফস্কেছে। তখন ওর শরীরে রোগটা ঢুকে গিয়েছিল। এখন রোগ সারিয়ে কী অবস্থায় আছে, সেটাই দেখার।
তবে ওই যে বললাম, যুবরাজের কামব্যাকটা খুব সহজ হবে না। ম্যাচ প্র্যাক্টিস যে একদম পায়নি ছেলেটা। ফলে রিফ্লেক্স বলুন কী পায়ের মুভমেন্ট, আগের জায়গায় পৌঁছতে সময় লাগবে। ম্যাচ খেলতে খেলতে এটা ঠিক হয়।
আমার কাছে অনেকেই জানতে চাইছেন, যুবরাজের কত নম্বরে ব্যাট করা উচিত, বা ওকে কোথায় ফিল্ডিং করালে ভাল হয়। আমি মনে করি, ও চার নম্বরেই ব্যাট করবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর চেয়ে নীচে নামলে কিছু করা যায় না। যুবরাজকে জলে ফেলে দিন, তা হলেই ও নিজের রাস্তা খুঁজে নিতে পারবে।
আর ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বলি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘সেফ’ জায়গা বলে কিছু হয় না। কাউকে লুকিয়ে রাখা যায় না। ক্রিকেটে একটা কথাই আছে, আপনি যদি বলকে ভয় পান, তা হলে দেখবেন বল আপনার পিছু ধাওয়া করেছে। যুবরাজ হয়তো মিড অফ-মিড অনে ফিল্ডিং করতে পারে। কিন্তু যেখানেই করুক না কেন, নিজের ক্ষিপ্রতা, সতর্কতা ওকে বজায় রাখতে হবে।
যুবরাজকে ঘিরে একটা রূপকথার আবহ তৈরি হয়েছে। সবাই তাকিয়ে থাকবে এই ম্যাচটার দিকে। আমি মনে করি, এই সব চাপ যুবরাজ ওর অভিজ্ঞতা দিয়ে সামলে দেবে। তবে শারীরিক ভাবে ও কতটা তৈরি, সেটাই দেখার।
ম্যাচ প্র্যাক্টিসের অভাব সচিনকে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ডুবিয়েছে। তিনটে ইনিংসের পরই ওর অবসর নেওয়ার কথা উঠে পড়েছে। আমি নিশ্চিত, সচিন সবাইকে চুপ করিয়ে দেবে। আর যুবরাজ কী করবে? দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
যুবরাজের জন্য আমার যাবতীয় শুভেচ্ছা রইল। তুমি ভাল খেলো। |