আবেগে ভাসা দুপুর থেকে ইন্দ্রপতনের ধাক্কায় স্তম্ভিত করে যাওয়া সন্ধ্যা। ফ্লাশিং মেডোর লোকগাথায় সম্ভবত পাকাপাকি জায়গা করে নিল দিনটা। যে দিন ট্যুরে জীবনের শেষ টেনিস পয়েন্টটা খেলে র্যাকেট তুলে রাখলেন অ্যান্ডি রডিক। আর ওপেন যুগের প্রথম পুরুষ হিসাবে ছ’নম্বর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব জয়ের স্বপ্ন চুরমার হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে ছিটকে গেলেন রজার ফেডেরার।
অন্য দিকে, আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস খেতাবের সামনে লিয়েন্ডার পেজ। ভারতীয় তারকা ও তাঁর জুড়ি রাদেক স্টেপানেক গতকাল শেষ আটে জুলিয়ান নোয়েল-ফিলিপ পোলাসেকের বিরুদ্ধে জিতেছিলেন ৬-২, ৬-৪। সেমিফাইনালে আজ প্রথম সেট ৬-৬ চলার সময় পেজদের প্রতিপক্ষ, ষষ্ঠ বাছাই জুটি মার্সেল গ্রানোলার্স-মার্ক লোপেজ ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ায় তাঁরা ফাইনালে চলে গেলেন।
উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিকে রুপো জয়ী ফেডেরারকে কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে দিলেন চেক টমাস বের্ডিচ। ফেডেরারের সঙ্গে শেষ ছয় মোলাকাতে তিন বার শেষ হাসিটা তিনি হেসেছেন। বিশ্বের এক নম্বরকে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ বাছাই হারালেন ৭-৬, ৬-৪, ৩-৬, ৬-৩। পরে বলেন, “আমার খেলায় এমন কিছু রয়েছে যা রজার একদম পছন্দ করে না।” বের্ডিচের দাবি নিয়ে পরে ফেডেরারকে প্রশ্ন করা হলে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে বলেন, “ট্যুরে ওর খেলা প্রতিটা ম্যাচ দেখি না। তাই জবাব দিতে পারছি না।” |
বিদায়-রজার। ছবি: রয়টার্স |
বের্ডিচের বিরুদ্ধে ১১-৩ রেকর্ড থাকা ফেডেরার বুধবার প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভেঙে শুরুটা আক্রমণাত্মক করেছিলেন। কিন্তু প্রথম সেট এক বার ৩-৩ হওয়ার পর বিগ সার্ভ আর খুনে ফোরহ্যান্ডে ক্রমশ ম্যাচে জাঁকিয়ে বসেন চেক তরুণ। তৃতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়ালেও ম্যাচে চল্লিশটা আনফোর্সড এরর করা ফেডেরার পরে স্বীকার করেন, “আজ আমার কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না।” উইম্বলডন এবং এক নম্বরের সিংহাসন ফিরে পাওয়ার বছরটাকে খেলোয়াড় জীবনের অন্যতম সেরা বলে এসেছেন এতদিন। ফ্লাশিং মেডোয় জিতে শেষটা মধুরেণ করতে যে মরিয়া ছিলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরুর আগেই বলে রেখেছিলেন। সেই সাধ অপূর্ণই থাকল ফেডেরারের। বের্ডিচের পরের লড়াই বিশ্বের চার নম্বর অ্যান্ডি মারের বিরুদ্ধে। যিনি মারিন চিলিচকে ৩-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-০ হারিয়ে সেমিফাইনালে গেলেন।
ফ্লাশিং মেডোর হৃদয় জুড়ে থাকলেন অবশ্য আর এক অ্যান্ডি। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে হুয়ান মার্তিন দেল পোত্রোর কাছে ৬-৭, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ হেরে টেনিসকে চির বিদায় জানানোর মুহূর্তে অ্যান্ডি রডিক বলে গেলেন, “এর থেকে মধুর শেষ আর হতে পারত না।” ২০০৩-এ এই কোর্টেই নিজের একমাত্র গ্রান্ড স্ল্যাম জেতেন। সেখানেই শেষ করার দিন কাঁদিয়ে গেলেন টাইগার উডসকে পর্যন্ত। শেষ সার্ভিস গেম খেলার সময় চিক চিক করছিল রডিকের চোখ। দর্শকাসনে ততক্ষণে কাঁদছেন তাঁর মা এবং স্ত্রী, অভিনেত্রী-মডেল ব্রুকলিন ডেকার। কান্নাটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্যালারিতে। ছ’ফুট ছ’ইঞ্চির দৈত্যকায় দেল পোত্রো ম্যাচ জিতে নেটে রডিকের সঙ্গে হাত মেলাতে এসে দশর্কদের বলেন, “মুহূর্তটা অ্যান্ডির।”
তোয়ালেতে মুখ ঢেকে মাইক হাতে রডিক বলেন, “খারাপ সময়েও পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। এই অভিজ্ঞতার প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। শ্রেফ বারো বছরের বাচ্চার মতো খেলার আনন্দে খেলেছি।” টাইগার উডস ততক্ষণে টুইট করেছেন, “তোমার জন্য কাঁদছি। প্রতিজ্ঞা, উৎকর্ষের বছরগুলো উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।” রডিকের বিদায়ী ম্যাচের পরেই অ্যার্থার অ্যাশ কোর্টে নামেন সেরেনা উইলিয়ামস। আনা ইভানোভিচকে ৬-১, ৬-৩ উড়িয়ে সারা ইরানির সঙ্গে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন। নোভাক জকোভিচের বিরুদ্ধে ৪-৬, ১-৬, ১-৩ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে ম্যাচ ছাড়লেন স্টানিসলাস ওয়াওরিঙ্কা। টানা ১৪ নম্বর গ্রান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেলেন জকোভিচ। তাঁর সামনে দেল পোত্রো। |