|
|
|
|
অপরাধীর কোমর ভাঙতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বিহারে |
স্বপন সরকার • পটনা |
অপরাধ দমনে এ বার অভিনব এক পথ নিচ্ছে নীতীশ সরকার। রাজ্যের ‘অর্থবান’ অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাদের অপরাধ-সাম্রাজ্যের মূল জায়গায় আঘাত করার পরিকল্পনা করেছে সরকার।
বিহার পুলিশের এক কর্তার কথায়: বড়, অর্থবান অপরাধীদের সব থেকে বড় শক্তি তাদের আর্থিক ক্ষমতা। অর্থ থাকলে পেশী-শক্তি সহজেই কেনা যায়। নিয়ন্ত্রণে আনা যায় অপরাধ জগতকে। সংগঠিত করা যায় একটার পর একটা অপরাধ। বিহার সরকার বড় অপরাধীদের সেই সক্ষমতার কোমরটাই ভেঙে দিতে চাইছে। আর এই কাজে বিহার সরকারের দোসর কেন্দ্রীয় সরকার। তদন্তের কাজ করবে রাজ্যের অর্থনৈতিক দমন বিভাগ। উল্লেখ্য, এই বছরেই এই বিভাগ চালু হয়েছে রাজ্যে। আর বেআইনি উপায়ে আয় করা অর্থ বাজেয়াপ্ত করবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কারণ এই ধরনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাজ্যের নেই। রাজ্য পুলিশের ডিজি অভয়ানন্দ বলেন, “আমরা রাজ্যের বড় অপরাধীদের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। তবে আইন অনুযায়ী রাজ্য পুলিশ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে না। কেন্দ্রীয় সংস্থা, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বিষয়টি দেখবে। আইন মোতাবেক এই কাজ করা হবে। এই ব্যাপারে রাজ্যের অর্থনৈতিক অপরাধ দমন বিভাগ তাদের সাহায্য করবে।”
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি অফিসারদের আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত বিহার সরকার আগেই নিয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রাক্তন ডিজিপি থেকে শুরু করে কয়েকজন আইএএস অফিসারের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে নীতীশ সরকার। এখনও পর্যন্ত বিহার বিশেষ আদালত আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ছ’জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৩৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এরই পাশাপাশি, রাজ্যের ক্রমবর্ধমান অপরাধ জগতে বড়-সড় আঘাত হানতে তৈরি সরকার।
রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ইতিমধ্যেই দানাপুরের কোথওয়া ব্লকের এক প্রাক্তন প্রধান, ঋতলাল যাদবের ১ কোটি ৩৩ লক্ষ্য টাকার বেআইনি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বার তার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ঋতলাল যাদবের বিরুদ্ধে খুন, তোলা আদায় এবং অপহরণের মতো ২০টি মামলা আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অপরাধীর নামে-বেনামে অন্তত ৫ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি রয়েছে। অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখা তার মধ্যে মাত্র ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। ঋতলালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হলে নজির গড়বে নীতীশ কুমারের ‘বিহার’। অপরাধীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রথম ঘটনা ঘটবে। এই প্রাক্তন প্রধানের নামে দানাপুর, খগৌল এবং বিঠায় প্রচুর জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং বিমায় এই ব্যক্তির নামে অর্থনৈতিক দমন বিভাগ বেআইনি বিনিয়োগের সন্ধান পেয়েছে।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব অপরাধীরদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য বেআইনি পথে অর্থ সংক্রান্ত ২০০২ সালের আইন অনুযায়ী কাজ করা হবে। সেই আইন অনুযায়ী ঋতলালের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। ইডি সূত্রটির বক্তব্য, বিহারে অনেক বড় বড় অপরাধী তাদের কাজকর্ম চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তালিকায় আছে সিওয়ানের প্রাক্তন আরজেডি সাংসদ, মহম্মদ শাহাবুদ্দিনও। এই প্রাক্তন সাংসদ এখন সিওয়ানের জেলে বন্দি। কিন্তু পুলিশের অভিযোগ, সারা বিহার জুড়ে চলছে তাঁর অপরাধ-সাম্রাজ্য। |
|
|
|
|
|