নিখোঁজ শিশু উদ্ধারে পশ্চিমবঙ্গই দিশারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের
‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’ ছবির জামাল, সালিম ও লতিকার গল্প মনে আছে? মুম্বইয়ের বস্তির এই তিন কিশোর-কিশোরী পড়েছিল অন্ধকার জগতের একদল লোকের খপ্পরে। যে লোকগুলোর কাজ ছিল কিশোর-কিশোরীদের অপহরণ করে নানা রকম বেআইনি কাজে নামানো।
এ বার বাস্তবের জামাল-সালিম-লতিকাদের রক্ষা করতে কোমর বেঁধে নামতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। হারিয়ে যাওয়া শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উদ্ধার করতে দেশের সমস্ত থানাকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলা হচ্ছে। এবং এই কাজে পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ সামনে রেখেই এগোতে চাইছে কেন্দ্র। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১১ সালে গোটা দেশে ৬০ হাজার শিশু হারিয়ে গিয়েছে, যাদের আর খোঁজ মেলেনি। বাচ্চাদের নিখোঁজ হওয়ার এই হিসেবের নিরিখে রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের ক্ষেত্রেও চোখে পড়ার মতো সাফল্য দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। যার পিছনে রয়েছে ‘ট্র্যাক দ্য মিসিং চিলড্রেন’ ওয়েবসাইট। এই সাইটের দৌলতে গত চার বছরে রাজ্যের ৩০ শতাংশ নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধার করা গিয়েছে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলায় কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে নিখোঁজ শিশুদের বিষয়ে জবাবদিহি চেয়েছে। ২০০৬-এ নিঠারি-কাণ্ডের পরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গোটা দেশে নিখোঁজ শিশুদের একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার সুপারিশ করেছিল। সেই অনুযায়ী ২০০৮-এ ‘ট্র্যাক দ্য মিসিং চিলড্রেন’ নামের ওই তথ্যভাণ্ডার তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। সাফল্যও আসতে শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে চালু হয়েছিল এই ব্যবস্থা। তার সাফল্য দেখে এ বার এই ‘নেটওয়ার্ক’ দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র।
কী ভাবে কাজ করে এই ব্যবস্থা?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এই ওয়েবসাইটটি ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলাতেও চালু করা হয়েছিল। এখন যে কোনও থানায় কোনও শিশু নিখোঁজের অভিযোগ জমা পড়লেই তার ছবি ও তথ্য ওই ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তথা সিআইডি, রাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং আরও অনেকে ওই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের উদ্ধার করছে। ধরা যাক, প্রত্যন্ত কোনও গ্রামে কোনও শিশু উদ্ধার হল। রাজ্য পুলিশের তরফে সঙ্গে সঙ্গে ওই সাইটে তার ছবি ও তথ্য আপলোড করে দেওয়া হল। সেই সূত্র ধরে কলকাতা পুলিশ খুঁজে বার করল শহরে তার আসল ঠিকানা।
আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে জানিয়েছেন, এ বার এই ব্যবস্থা দেশের সমস্ত থানায় চালু হবে। অর্থাৎ এই তথ্যভাণ্ডারে একে একে জুড়ে যাবে সমস্ত রাজ্য, সেই সঙ্গে দেশের সমস্ত নিরাপত্তা ও তদন্ত সংস্থা, বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই ওয়েবসাইটে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে তারা প্রত্যেকেই। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কোনও কিশোরী দিল্লিতে উদ্ধার হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানতে পারবে। তাতে উদ্ধারের কাজটা হবে দ্রুত।
হারিয়ে যাওয়ার পরে কোথায় যাচ্ছে এই সব শিশু-কিশোর-কিশোরীরা? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এদের অপহরণ করে দেহব্যবসা, ভিক্ষাবৃত্তি এবং চোরাকারবারে নামানো হয়। কিডনি কেটে বিক্রিও করে দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের জনস্বার্থ মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য উদ্ধৃত করেই বলা হয়েছে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দেশে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬০০ শিশু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। যাদের মধ্যে ৫৫ হাজার ৪৭০ জনের খোঁজই মেলেনি। এই নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ১১ হাজার ৫২৭ জন শিশু। দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমীক্ষা বলছে, দুই ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলি থেকে শিশু নিখোঁজের সংখ্যা সবথেকে বেশি।
হারিয়ে যাওয়া শিশুর নিরিখে এত দিন পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে ছিল। এ বার তাদের উদ্ধারে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশকে কতটা পথ দেখাতে পারে, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.